রাজধানীর সড়কগুলোতে বছরজুড়েই চলে খোঁড়াখুঁড়ি। আর বর্ষা এলে এর মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা ও তীব্র যানজটের। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শহরবাসী।
গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষের পয়ঃবর্জ্য মেশা পানি ও ড্রেনের পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিলে একাকার হয়ে যায় বাসাবাড়ি, সড়কে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
সরেজমিনে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পুরান ঢাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলি। পুরান ঢাকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মরণির সিদ্দিকবাজার এলাকায় সড়ক হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। তাছাড়া মাজেদ সরদার রোড, নাজিরাবাজার, ইসলামবাগ এলাকার নিচু গলিগুলোতে পানি জমে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
নাজিরাবাজার রোডে এলাকার বিভিন্ন সড়ক কয়েক মাস ধরে কাটা। ড্রেনেজ লাইন ঠিক করার জন্য যত্রতত্র রাখা পাইপ, বালু, ইট-সুরকি। সতীশ চন্দ্র সাহা লেনের পুরোটাই খোঁড়া। এলাকার মানুষের ভোগান্তি এতে চরমে। ফুটপাত দিয়েও চলাচল করা কষ্টকর। তাছাড়া বৃষ্টি হলে হাঁটু পরিমাণ পানিতে ভেসে যায় পুরো সড়ক। এমনটা আর কতদিন চলবে বলতে পারছেন না এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা শারমিন আক্তার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রাস্তা কেটে রাখার কারণে বাসায় যাতায়াত করতে সমস্যা। একদিন বৃষ্টিতে বাজার করে ফেরার পথে ছিটকে ড্রেনে পড়ে গিয়েছিলাম। আশপাশের মানুষ এসে আমাকে উদ্ধার করেন। মাসের পর মাস আমাদের সড়কটি এভাবে কেটে রাখা হয়েছে।”
ফায়ার সার্ভিস মোড়ের চা বিক্রেতা মোতালেব হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গত দুই মাস ধরে গলির ভেতরের রাস্তাটিতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। ফলে ক্রেতারা ভাঙা রাস্তায় আসছেন না। আগের থেকে আমাদের অনেক কম কেনাবেচা হচ্ছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাজ্জাদ হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া-আসার পথে অনেক সমস্যা হচ্ছে। গত ৩ মাস ধরে এই এলাকায় কোনো রিকশাও ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না।”
নাজিরা বাজার রোডের ব্যবসায়ী সুমন মিয়া সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বছরের অর্ধেক সময় চলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। আর বাকি অর্ধেক সময় রাস্তা থাকে বৃষ্টির পানির নিচে। তাহলে এ রাস্তা সংস্কার করে কী লাভ। যদি মানুষ রাস্তা ব্যবহার করতেই না পারে, তাহলে এইগুলোর সংস্কারের কি প্রয়োজন।”
নগরীর জলাবদ্ধতা ও সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বছরজুড়ে নানা উন্নয়নমূলক কাজে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলে। কখনো সিটি করপোরেশন, কখনো ওয়াসা, আবার কখনো অন্যান্য সেবামূলক সংস্থার উন্নয়ন কাজে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি জলাবদ্ধতা বাড়িয়ে দেয়। এসব সংস্থার মধ্যে কাজের সমন্বয় সাধন করেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। তা না হলে হাজার হাজার কোটি টাকার নানা প্রকল্প গ্রহণের কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না।”
জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আদিল মুহাম্মদ আরও বলেন, “মহানগরীর হারিয়ে যাওয়া খালগুলোকে দখলমুক্ত করে যথাযথ সংস্কার করা ছাড়া কখনোই জলাবদ্ধতা দূর করা যাবে না। আগামীতে নগরায়ণ প্রক্রিয়াকে একটি পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে হবে। বৃষ্টির পানি সহজে সরে যেতে না পারলে জলাবদ্ধতা ঠেকানো সম্ভব হবে না। এছাড়া বর্ষা মৌসুমের আগেই ভরাট হয়ে যাওয়া খাল-নদী খনন, খালের তলদেশে জমাকৃত বর্জ্য অপসারণ করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল রাখতে পারলে তা আগামীতে জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।”
সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা জরুরি প্রয়োজনে অন্য সেবা সংস্থাগুলোকে বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে সড়ক কাটার অনুমতি দিয়ে থাকি। কিন্তু অনেক সংস্থা আছে, যারা শর্তগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করে না। তাছাড়া, সরকারের বড় বড় উন্নয়ন কাজের জন্যও সড়ক কাটতে হয়। সেক্ষেত্রে আমরা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করি জনগণের দুর্ভোগ কমিয়ে কম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে।”