প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই, যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়ার সময় পরিবেশ রক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।”
বুধবার (৫ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৪’ এবং ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৪’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতাকে হত্যার পর আমাদের দুই-বোনকে দেশে আসতে দেয়নি তখনকার সরকার। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসি, অনেক ঝড়ঝাপটা মাথায় নিয়ে। আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগ আমাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। আমি দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আসি একটা প্রত্যয় নিয়ে যে, জাতির জন্য আমার বাবা সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন; সেই জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ শুরু করেছি।
কোনো কারণে গাছ কাটতে হলে তিনগুণ বেশি গাছ লাগাতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি। আরও বেশি করে বনায়নের উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে। এরইমধ্যে ২৫ ভাগের মতো করতে পেরেছি। এদেশের মানুষকে রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব। যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশ রক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কোনো কারণে গাছ কাটতে হলে তিনগুণ বেশি গাছ লাগাতে হবে, সে শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়।”
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারের উৎখাত আন্দোলনের নামে তারা যেমন মানুষকে হত্যা করেছে, তেমনি লাখো লাখো বৃক্ষ নিধন করেছে। আমরা যেখানে গাছ লাগাই, সেগুলো তারা ধ্বংস করেছে। এটাই দুর্ভাগ্যজনক। ধ্বংসযজ্ঞগুলো দেশের জন্য ক্ষতিকর।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যে যেখানে পারেন, সেখানে অন্তত একটি করে গাছ লাগান। পরিবেশ রক্ষা করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে এবারের মতো এতো দীর্ঘসময় ধরে জলোচ্ছ্বাস এর আগে হয়নি। উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় টেকসই ঘর তৈরি করা হচ্ছে। উপকূলের মানুষদের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা করতে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে সরকার আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “সুন্দরবন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। তাই সুন্দরবনকে আরও সুরক্ষিত করা হয়েছে। আর কে কী দেবে সে আশায় না থেকে নিজেদের অর্থেই জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে সুরক্ষিত করা এবং পরিবেশ রক্ষা করাই লক্ষ্য।”