তিন দিন পর বসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন। এই অধিবেশনের আগে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, সংসদে বিরোধী দল হচ্ছে কারা? ১১ আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি, নাকি ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোট?
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থাকা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের অধিকাংশই এখনো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি যা বলবেন, তারা সেই অনুযায়ীই কাজ করবেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন, সংকেত পেলে তারাই হচ্ছেন বিরোধী দল।
এদিকে রোববার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনের বৈঠক থেকে সংসদে ভূমিকার প্রশ্নে এবং সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টনের বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, সংসদে সরকার বিরোধী অবস্থানেই থাকবেন তারা। তিনি বলেন, “কে বিরোধী দল হবে, সেটা স্বীকৃতি দেওয়ার এখতিয়ার স্পিকারের। এটা তার সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা সংসদীয় দল হিসেবে অপজিশনে কাজ করব।”
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, জাতীয় পার্টিই বিরোধী দল হচ্ছে।
গত ৭ জানুয়ারির ভোটে ২৯৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩ আসন। জাতীয় পার্টি ১১ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৬২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এতো স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাও দেশে এই প্রথম।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও রাজশাহী-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. শফিকুর রহমান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে আমি আওয়ামী লীগ করি। নেত্রী যে অগ্রসর বাংলাদেশ করছেন, তার সারথি হতে চাই। তিনি যেই নির্দেশ দেবেন আমি তাই মানব।”
গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য নাহিদ নিগার বলেন, সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে যদি আমাকে বিরোধী পদে বসতে হয় তবে আমি সেটাও করব।”
ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি সারা জীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিরোধী দলে বসা আমার কষ্টের ব্যাপার।”
তিনবারে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনও দলের সঙ্গে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। তিনি বলেন, “স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আমরা যারা আছি, কেউ বিরোধী দল হতে ইচ্ছুক না। সংসদ নেত্রী আর দু-একদিনেক মধ্যে আমাদের নির্দেশনা দেবেন।”
একই কথা জানিয়েছেন ঢাকা-৫ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তিনি বলেন, “আমি এখনো ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ আমার শিরায় শিরায়। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছি। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থে তিনি যে দিক নির্দেশনা দেবেন, সেটাই পালন করবো।”
এ বিষয়ে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, যা-ই ঘটুক না কেন সেটা কার্যপ্রণালী বিধি এবং সংবিধান মেনেই হবে। নতুন মেয়াদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সংসদ। ৩০ জানুয়ারি স্পষ্ট হবে কারা বসছেন বিরোধী দলের আসনে।