সংঘাত, সহিংসতার শঙ্কার মধ্য দিয়েই বুধবার (৮ মে) প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে সকাল ৮টায়। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে।
এ ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ২২টি উপজেলায় ইভিএমে এবং বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এবং মামলাসহ অন্যান্য কারণে ১৩টি উপজেলায় ভোট হচ্ছে না।
প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র। ফলে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮৬ জনে। তবে নানা কারণে কয়েকটি উপজেলা বাতিল বা পিছিয়ে যাওয়ায় এ প্রার্থী সংখ্যা এক হাজার ৬৩১ জনে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচনে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৩৩ জন। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রে ৪১ হাজার ৫৩০ জন, মোবাইল টিমে ১১ হাজার ৮৮৩ জন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৫ হাজার ৩৬৮ জন এবং অন্যান্য ডিউটিতে ২৩ হাজার ৮৫২ জন। নির্বাচনে স্বাভাবিক এলাকার ভোটকেন্দ্রে তিন জন পুলিশ, চার জন আনসার/ভিডিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭-১৮ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-২১ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যাব মোতায়েন থাকবে দুই হাজার ৩৯২ জন ও রিজার্ভ থাকবে ২৫৬ জন। ভোট কেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ জন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদসহ তিনটি পদেই দলীয় মনোনয়নে দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান রয়েছে। তবে এবার মাত্র একজন প্রার্থী দলীয় প্রতীকে ভোট করছেন। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী নজরুল ইসলাম সরোয়ার মোল্লা নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় লাঙ্গল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা এবার উপজেলা পরিষদে দল থেকে কোনও প্রার্থী মনোনয়ন দেবে না। অন্যদিকে সরকারবিরোধী বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করেছে। অবশ্য দলীয়ভাবে ভোট বর্জন করলেও বেশ কিছু উপজেলায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পাঠানো হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, তারা কেন্দ্রীয়ভাবে এ ভোট মনিটর করবে। কোনও ধরনের অনিয়ম হলেই তাৎক্ষণিকভাবে তারা ব্যবস্থা নেবে।
প্রথমধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের জন্য গত ২১ মার্চ তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে মামলাসহ অন্যান্য কারণে ৮টি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। এছাড়া তিনটি পদের প্রার্থী বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ায় ৫টিতে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে ১৩৯টি উপজেলায় বুধবার ভোট হবে।
যে ৫টি উপজেলার সব পদে বিনাপ্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সেগুলো হলো– নোয়াখালীর হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, ফেনীর পরশুরাম, বাগেরহাট সদর ও মাদারীপুরে শিবচর। সব মিলিয়ে প্রথম ধাপে ৮ জন চেয়ারম্যান, ১০ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
মামলার কারণে নারায়ণগঞ্জ সদর, কুমিল্লার লাঙ্গলকোর্ট ও জামালপুরের সরিষাবাড়ি, প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে টাঙ্গাইলের গোপালপুর, নওগাঁর মহাদেবপুর, প্রশাসনিক কারণে বান্দরবানের থানছি ও রোয়াংছড়ি এবং ধাপ পরিবর্তনের কারণে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর নির্বাচন স্থগিত হয়েছে।