ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ ৯( মার্চ) শনিবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয় যা বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ভোট হচ্ছে শুধু মেয়র পদে এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ অবসান হওয়ায় সেখানে মেয়র ও কাউন্সিলরের সব কটি পদে ভোট হচ্ছে। এই দুই সিটিতে এবার সব কেন্দ্রেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
বিএনপি অংশ না নেওয়ায় এবং আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করায় এবার দুই সিটির নির্বাচন অনেকটা ‘নির্দলীয়’ হতে যাচ্ছে। মেয়র নির্বাচনে এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুজন ও ময়মনসিংহে তিনজন নেতা প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ না নিলেও কুমিল্লায় ভোটের আলোচনায় আছে বিএনপিও। কুমিল্লায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা প্রার্থী হয়েছেন। ফলে কুমিল্লায় বিএনপির ভোটাররাও জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহ নগর আওয়ামী লীগে দুটি পক্ষ রয়েছে। দুই পক্ষ থেকেই প্রার্থী রয়েছে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে এবার মেয়র পদের প্রার্থীরা হলেন সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু। তার নির্বাচনী প্রতীক টেবিল ঘড়ি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেসামুল আলম লড়ছেন ঘোড়া প্রতীকে, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু লড়ছেন হাতি প্রতীকে, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক লড়ছেন হরিণ প্রতীকে এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল লড়ছেন লাঙল প্রতীকে।
নির্বাচন কমিশন বলছে, নগরীর ১২৮টি কেন্দ্রের ৯৯০টি বুথে ভোট গ্রহণ হবে। এ জন্য ১ হাজার ৫০০ ইভিএম প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে ইকরামুল হক টিটু সকাল সাড়ে আটটায় নগরীর প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাই স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন। সকাল ৯টায় সাদেকুল হক খান ভোট দেবেন এডওয়ার্ড স্কুল কেন্দ্রে এবং সকাল সাড়ে ৯টা মুসলিম গার্লস স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেবেন এহতেসামুল আলম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালের দিকে নারী বিভিন্ন কেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি। পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরীতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭২ জন পুরুষ, ১ লাখ ৭২ হাজার ৬১৫ জন নারী ও ৯ জন হিজড়া। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিপরীতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি জানান, নির্বাচনের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি ৭ প্লাটুন বিজিবি, ১১ প্লাটুন পুলিশ, আর্মড পুলিশ এবং আনসার সদস্য, ১৭ টিম র্যাব ছাড়াও ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
বেলায়েত হোসেন জানান, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৪ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ৫ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে মেয়র আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া পদে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) উপনির্বাচনে লড়ছেন ৪ প্রার্থী। এর মধ্যে ঘড়ি প্রতীকে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, ঘোড়া প্রতীকে সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দলের কুমিল্লা মহানগর আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন কায়সার, বাস প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার ও হাতি প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সকাল থেকেই নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকক্ষে ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৬৪০ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১ হাজার ২৮০ জন পোলিং এজেন্ট, ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকালে নিরাপত্তার জন্য ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আচরণবিধি প্রতিপালনে ২৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৭ টিমে ৯৩৯ জন র্যাব সদস্য, পুলিশের ২৭টি মোবাইল টিমে ১ হাজার ৩৩৯ জন ও ৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে আছে। এর বাইরে দুই থানার দুটি টিম রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে আছে।