রাত পোহালেই ১৬ ডিসেম্বর। পৌষের হিমসকালে বাংলাদেশ মেতে উঠবে লাল-সবুজের উৎসবে। যে মাটির সবুজ ঘাস লাল হয়েছিল ৩০ লাখ শহীদের রক্তে, সেই দেশটির যেখানে চোখ যায়, আজ সেখানেই লাল-সবুজ পতাকার সমারোহ। রক্তের দামে কেনা পতাকা উৎসবের প্রতীক। পথে পথে পতাকা বিক্রেতা, স্কুলপড়ুয়া থেকে বৃদ্ধ, কারোরই আগ্রহের কমতি নেই সেই পতাকা নিয়ে সাজার বা সাজানোর। তরুণ-তরুণীদের মাথায়, পোশাকে, অফিস-আদালত, পাড়ার দোকান থেকে বাড়ির ছাদে ছাদে শোভা পাচ্ছে লাল আর সবুজ। সড়কদ্বীপ, গাড়ির সামনের অংশ কিংবা মোটরসাইকেল—সবকিছুই মোড়ানো লাল-সবুজে। সব জায়গায় বিজয়ের রং, জাতীয় পতাকার রং।
বাঙালির গৌরবের দিন। বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। যেসব বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাদের শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই এই দিনে মহার্ঘ প্রকাশ পাবে আজ। ১৯৭১ সালের এদিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নতমস্তকে আত্মসমপর্ণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। এরই এক পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত নিরীহ নিরস্ত্র সাধারণ বাঙালিদের ওপর চালায় মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে। এর আগেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে হানাদারদের প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে অর্জিত হয় চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর পরাক্রমের কাছে মাথা নত করে পাকিস্তানি ঘাতক দল। পৃথিবীর বুকে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। বাঙালি ঊর্ধ্বলোকে তুলে ধরে প্রাণপ্রিয় লাল-সবুজ পতাকা।
এবার বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকী। বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ ও মোড় আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পতাকা শোভা পাবে বিভিন্ন আঙিনায়। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন অলিগলিতে মাইকে বাজতে শোনা যায় বঙ্গবন্ধুর রেকর্ড করা ভাষণ ও মুক্তির গান।