সড়কে পরিবহন খরচ ও ঘাটে ঘাটে চাদাঁবাজির কারণে সবজির দাম বেড়ে যায় বহুগুণ। উৎপাদনকারী চাষির কাছ থেকে সবজি শহুরে ভোক্তার কাছে পৌঁছা অবধি অনেকবার হাত বদল ঘটে। যতবার হাত বদল ঘটে ততবারই দাম বাড়ে। ভোক্তার কাছে এসে দাম বেড়ে যায় অবিশ্বাস রকম।
বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরেই এমনটা চলে এসেছে। যে সবজির দাম গ্রামে প্রতি কেজি ১০ টাকা, সেটাই রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয় ৫০-৭০ টাকা কেজি দরে। ১০ টাকার সবজিতে ৪০-৬০ টাকাই যায় পাইকারি ও মধ্যসত্বভোগিদের পকেটে।
এমন পরিস্থিতিতে এবার দাম নিয়ন্ত্রণে ট্রেনে সবজি পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। এজন্য যাত্রীবাহী ট্রেনে যুক্ত হবে ল্যাগেজ ভ্যঅন। পাশাপাশি সবজি পরিবহনে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন করা হবে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও। এসব ট্রেনে করে উৎপাদনকারী চাষির কাছ থেকে সরাসরি সবজি চলে আসবে রাজধানীর বাজারে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চালু হতে পারে সবজির ট্রেন। দেশে সবজির চাহিদার বড় অংশের জোগান দেওয়া যশোর অঞ্চল থেকে ট্রেনে সবজি আনা হবে। যশোর-খুলনা অঞ্চলের পাশাপাশি বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পঞ্চগড় জেলাকে সবজি পরিবহনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক বলেন, যশোর অঞ্চলের সবজির বড় পাইকারি বাজার সাতমাইল বারিনগর হাট। সেখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সড়ক পথে সবজি পরিবহনে অতিরিক্ত খরচসহ পথে পথে চাঁদা দিতে হয় তাদের। এতে সবজির দামে বড় প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে, যশোর থেকে ঢাকার রেল যোগাযোগ ভালো থাকায় উৎসাহ দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় এক সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রাকে করে গাড়ির অর্ধেক পণ্য নিলেও যে ভাড়া দিতে হয়, ট্রাকভর্তি পণ্য নিলেও একই ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু ট্রেনে নিলে পণ্য হিসাবে ভাড়া দিতে হবে, এতে খরচ কমবে। তাছাড়া ট্রেনে গেলে যানজটে পড়বে না। এতে করে সময় সাশ্রয় হবে। আবার অল্প খরচেও পণ্য পরিহবন করা যাবে। ট্রেন চালু হলে কৃষক, ব্যবসায়ীর পাশাপাশি সরকারও লাভবান হবে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদারের মতে, যশোর স্টেশন থেকে কৃষকদের জন্য অন্তত দুইটি বগি রাখা উচিত। এতে তাদের পরিবহন খরচ কমে আসবে। যার প্রভাব পড়বে রাজধানীর সবজির বাজারেও।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক জানান, যেসব ট্রেনে ল্যাগেজ ভ্যান আছে, সেগুলোতে অতিরিক্ত একটি বা দুইটি ল্যাগেজ ভ্যান লাগানো হচ্ছে। খুলনা, পঞ্চগড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের স্থানীয় হাটবাজারের সঙ্গে মিল রেখে এক-দুইদিন স্পেশাল ল্যাগেজ ভ্যান দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হবে। এরইমধ্যে রেল যোগাযোগ আছে এমন সবজি উৎপাদনকারী জেলাগুলোর ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে রেল বিভাগ।