• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উচ্চ আদালতের রায়ে বাড়ছে বাংলার ব্যবহার


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, ১১:১২ এএম
উচ্চ আদালতের রায়ে বাড়ছে বাংলার ব্যবহার

মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার কারণে উচ্চ আদালতে বাড়ছে বাংলায় রায়-আদেশের সংখ্যা। আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টে বিচারপতিরা এ মাসে রায় দিচ্ছেন বাংলায়।

সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছর থেকে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে প্রকাশিত সব রায় ও আদেশ বাংলায় দেখতে নতুন প্রযুক্তি সেবা যুক্ত করা হয়েছে। এখান থেকে গুগল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিচার প্রার্থী ও আইনজীবী বা যেকোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে প্রকাশিত রায়-আদেশ বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারেন। যদিও এ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে বাংলায় কতটি আদেশ ও রায় হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।

২০১০ সালের এপ্রিলে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে গত ১৪ বছরে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন নিয়মিত বাংলায় রায়-আদেশ দিচ্ছেন। মামলায় আইনজীবীরা শুনানি করেন ইংরেজিতে। কিন্তু তিনি বাংলায় রায় ঘোষণা করেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ মিলে বর্তমানে শতাধিক বিচারপতি রয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানও বাংলায় রায় লিখেছেন। আপিল বিভাগের বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম অসংখ্য রায় বাংলা ভাষায় দিয়েছেন। এছাড়া আপিল বিভাগের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যা মামলার ১৬ হাজার ৫৫২ পৃষ্ঠার রায় বাংলায় লিখেছেন।

ভাষার মাসের সম্মানে বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস, বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান, বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান, বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খান, বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মামলায় ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতি রায় দেন। তাদের মধ্যে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বাংলায় রায় লেখেন। এরপর থেকে তিনি বাংলায় রায় ও আদেশ দিচ্ছেন।

বাংলায় রায়ের প্রযুক্তি ব্যবহার ইংরেজিতে দেওয়া রায় বাংলায় অনুবাদ করতে ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি সফটওয়্যার যুক্ত হয়। ‘আমার ভাষা’ নামের এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আদালতের রায় বাংলায় অনুবাদ করা যায়। রায়-আদেশ বাংলা অনুবাদের নতুন এ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে একজন ব্যবহারকারীর প্রথমত ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে হবে। এরপর ব্যবহারকারী সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘রায় ও আদেশ’ মেনুতে গিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় রায় বা আদেশ খুঁজে বের করে পাশে থাকা অনুবাদ বাটনে ক্লিক করবেন। সঙ্গে সঙ্গেই রায়টি বাংলায় অনুবাদ হয়ে যাবে। তবে ফন্ট সমস্যা হলে ডান পাশে ওপরে থাকা ভাষা বাছাই ঘর থেকে বাংলা ভাষা চিহ্নিত করে দিতে হবে। এতে করে রায় বা আদেশ যত বড়ই হোক, এটা অনুবাদে কোনো সমস্যা হবে না।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, “এক সময় বাংলায় রায়–আদেশ উচ্চ আদালতে চিন্তাও করা যেত না। এখন আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে ৭০ শতাংশ মামলায় আইনজীবীদের বাংলায় যুক্তি উপস্থাপন করতে দেখা যায়। এছাড়া এখন অনেক বিচারপতি বাংলায় রায় দিয়ে আসছেন। সংগত কারণে সব মামলায় বাংলা ভাষায় রায় দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ অনেক মামলায় বিদেশিরা পক্ষ থাকেন। এছাড়া বিদেশি বিভিন্ন রায়ের নজির উপস্থাপন করা হয়। এ কারণে ইংরেজি ভাষায় রায় দিতে হয়। তবে এখন ইংরেজি ভাষায় দেওয়া রায় বাংলায় অনুবাদের সুযোগ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে।”

Link copied!