শ্রমবাজার হিসেবে সৌদি আরব থেকে বরাবরই রেমিট্যান্স বেশি এলেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত অর্থবছরের একই সময়ে ২ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও চলতি বছরের জুলাই-এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। হঠাৎ করে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
শনিবার (২৭ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘স্টট অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি’ শীর্ষক এক সভায় এই চিত্র তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
গত অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সৌদি আরব থেকে ৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এসেছে ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সৌদি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে।
এ বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, “বিষয়টি একেবারেই অস্বাভাবিক, কখনোই হয় না। কারণ আমরা জানি আমাদের বেশিরভাগ রেমিট্যান্স কোথা থেকে আসে। গত ১০ মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৯ দশমিক ২২ লাখ মানুষ গেছে। সেখান থেকে প্রত্যাশা মতো রেমিট্যান্স আসছে না। লোক যাওয়া ও রেমিট্যান্সের মধ্যে মিস ম্যাচ হচ্ছে। আগে সৌদি থেকে বেশি রেমিট্যান্স এলেও যুক্তরাষ্ট্র সেই জায়গাটা দখল করেছে।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে যারা যায় তাদের বেশিভাগই হোয়াইট কালার জব করে। অনেকেই ঘর-বাড়ি জমি-জমা বিক্রি করে দেশ থেকে টাকা নিয়ে চলে যান, অনেক শিক্ষার্থীও আছেন। তারা তো টাকা পাঠাতে পারেন না। তাহলে এই টাকা কোথা থেকে আসছে? যুক্তরাষ্ট্র থেকে এত টাকা আসার একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে, যেখান থেকে টাকাটা পাচার হয়ে গেছে সেই টাকাটা আবার ফেরত আসছে।”
তিনি আরও বলেন, “রেমিট্যান্সের ওপর যে আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ বা সাবসিডি দেওয়া হচ্ছে সেটার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
অপরদিকে, একই সভায় সিপিডি ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার নতুন ভিসা নীতিকে সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমেরিকাই একমাত্র বাজার যেখানে শুল্ক দিয়েও প্রতিযোগিতায় সক্ষম। ২০২৬ কিংবা ২০২৯ এর পরে ইউরোপ, কানাডা বা ভারতের বাজারে শূন্য শুল্কের সুবিধাটা থাকছে না। কিন্তু মার্কিন বাজারে শুল্ক দিয়ে ঢুকেও প্রতিযোগিতায় সক্ষম। এই বাজারটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য এই বিষয়টি সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।”
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, “আমেরিকা এটাকে সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক ও ভালো নির্বাচনের সঙ্গে সংযুক্ত করে ভিসার বিষয়টি এনেছে। একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য খুবই অপমানজনক। আমাদের নিজেদের জন্যও সুষ্ঠু নির্বাচন করা উচিত। শর্ত দিয়ে ভালো নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়া, জাতি হিসেবে ও নাগরিক হিসেবে এটা খুবই দুঃখজনক। এটার অনুধাবনটা সব রাজনৈতিক দলেরই থাকবে বলে আশা করি।”