সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রাণহানী ও সহিংসতার ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। এতে মুখ থুবড়ে পড়ে ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য। বিশেষত ই-কমার্স খাতের সব ধরনের কার্যক্রম থমকে যায়। এভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ই-কমার্স খাতের পণ্য ও সেবা লেনদেনে ধস নামে।
ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে স্বল্প সুদে ও বিনা জামানতে ঋণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে কখনোই যাতে নেওয়া না হয় সেজন্যও অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইমেজ কাটিয়ে তুলতে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ের ওপরেও জোর দেন তারা।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্যমতে, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া ব্যাপক সহিংসতার বিরূপ পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট, ফেসবুক বন্ধ থাকে গত ১৩ দিন ধরে। এই সময়ে দেশের ই-কমার্স খাতের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় লোকসান হয়েছে প্রায় এক হাজার ৭শ কোটি টাকা।
রাজধানীর বনানীতে ই-ক্যাব কার্যালয়ে গত বুধবার (৩১ জুলাই) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার জানান, ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার প্রথম ১০ দিনেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৪শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। পরবর্তী আরও তিনদিন মিলে ক্ষতি পৌঁছে যায় এক হাজার ৭শ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। সংগঠনের দুই হাজার ৭শর বেশি সদস্যের কাছ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে এই হিসাব করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, অনলাইনভিত্তিক যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে তার মধ্যে ই-কমার্স খাতে ৬শ কোটি টাকা, ই-ট্যুরিজম খাতে ৩শ কোটি টাকা এবং ই-লজিস্টিক খাতে ক্ষতি হয়েছে একশ কোটি টাকার বেশি।
ই-ক্যাব সভাপতি আরও বলেন, “সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ফেসবুক-কেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। যাদের অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন দেওয়ার মতো অবস্থাও নেই। একই সঙ্গে পুঁজির সংকটও তৈরি হয়েছে।”
ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যেসব সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে সেগুলোর অন্যতম, যাদের ব্যাংক ঋণ রয়েছে, তাদের কিস্তি পরিশোধে যেন অন্তত ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। যারা মূলধন সংকটে ভুগবে তাদের যাতে বিনা জামানতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
শুধু সরকারের কাছেই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মূল কোম্পানি মেটাকে যার ফেসবুকের এক মাসের জন্য বিজ্ঞাপনের টাকা পরিশোধ করেছেন, সেই টাকাটা যেন সম্পূর্ণ কেটে না নেওয়া হয়, সে বিষয়ে মেটার সঙ্গে যোগাযোগে সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়। বিজ্ঞাপনে সরকারের নেওয়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও উদ্যোক্তাদের ট্রেড লাইসেন্সের এ বছরের নবায়ন ফি মওকুফ করারও অনুরোধ করা হয়।
ই-ক্যাব সভাপতি বলেন, “ভবিষ্যতে জরুরি কোনো পরিস্থিতে যাতে অন্তত ই-মেইল ও এসএমএস এর মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়, সে বিষয়টি দেখতে হবে। একই সঙ্গে বিডার সঙ্গে যৌথভাবে এসব ব্যবসার ওপর যাতে বড় কোনো আঘাত না আসে, সে বিষয়ে একটি স্থায়ী পরিকল্পনা তৈরির জন্য ইক্যাব কাজ করবে।”