আমাদের দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে বহুমুখি ব্যবহারে আলুর জুড়ি মেলা ভার। তাই সব শ্রেণির মানুষের কাছেই অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য এই আলু। দেশে পণ্যটির উৎপাদন চাহিদামাফিক থাকলেও একসময় সংরক্ষণাগার ছিলো কম। এখন চাহিদামতো সংরক্ষণাগার তৈরি হয়েছে এবং উৎপাদনও স্বাভাবিক আছে। অস্বাভাবিক শুধু অতিমুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের লোভের ফাঁদ ‘সিন্ডিকেট’।
আগের মতো অবিক্রিত আলু সড়কে ফেলে দিতে হয় না। আলু এখন অনেক দামি, যেন বিশেষ কিছু। বিক্রি না হলেও দীর্ঘসময় রাখার জায়গা আছে। কৃষক নয়, মধ্যসত্বভোগীরা দীর্ঘসময় আলু সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ বানিয়েছেন। বাজারে একটি আলুর দাম আর একটি ডিমের দাম এখন প্রায় সমান।
বছর কয়েক আগেও দশ-বিশ টাকায় পাওয়া যেত যেই আলু, সেই আলুর কেজি এখন ১৯০ টাকা। নতুন আলুর এই দাম- অবিশ্বাস্য, তবে সত্যি। বাজারের উচ্চমূল্যের এই মুনাফা থেকে উৎপাদনকারী তৃণমূল কৃষক কিছুই পাচ্ছেন না। সুযোগ বুঝে ক্রেতার পকেট কেটে নিচ্ছে- ফরিয়া আর গুদামজাতকারী সিন্ডিকেট।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোল্ড স্টোরেজের আলুর দাম সহনীয় থাকলেও ঊর্ধ্বগতি নতুন আলুর দামে। প্রতি কেজি নতুন আলু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা। কোনো কোনো বাজারে আবার একই আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।
রাজধানীর বনানী কাঁচা বাজারে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায় ষাটোর্ধ্ব বয়সের এক ক্রেতাকে। একটু পর আবার সেই ব্যবসায়ীর দোকান থেকেই বাজার করলেন তিনি। ব্যবসায়ীর সঙ্গে কেন বাকবিতণ্ডা, জানতে চাইলে তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কি বলবো আপনাকে। ব্যবসায়ীরাই এখন সবকিছু। নতুন আলুর দাম বলে কেজি ১৮০ টাকা। এক কেজি আলু যদি ১৮০ টাকা হয়। তাহলে প্রতি কেজিতে কয়টা আলু হয়, আর প্রতিটি আলুর দামই বা কয় টাকা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বাজারে প্রতিদিন সব কাঁচামালের দাম বাড়ছে। দাম কমাতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যদি কঠোর হতো তাহলে ব্যবসায়ীরা সাহস পেতো না দাম বাড়ানোর। বাজারে আসলে দেখা যায়, সবকিছুর কি পরিমাণ বেশি দাম। আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। আগামীকাল আলু প্রতি কেজি কত টাকা যাবে। এইটা আপনি বুঝতে পারবেন আগামীকাল বাজারে আসলে, এর আগে না।”
বিতণ্ডায় জড়ানো ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলুর দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
বাজারে আলু ছাড়াও বেড়েছে সিম ও পটলের দাম। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) প্রতি কেজি সিম বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। যেখানে গতকাল সোমবার বিক্রি হয়েছিল ৬০-৬৫ টাকায়। একই সঙ্গে পটল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। যেখানে সোমবার বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়।
এছাড়া কোল্ড স্টোরেজের আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৬ টাকায়, আবার কেউ ৪৭ টাকাও বিক্রি করছেন। দেশি কাঁচামরিচ ৮০-৯০ টাকা, এলসি কাঁচা মরিচ ১০০-১১০ টাকা, টমোটো ৮০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, পালংশাক ১৫ টাকা, পুইশাক ২৬-৩০ টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে এসে নাঈম নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এক দুদিনের ব্যবধানে নতুন আলুর দাম অনেক বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায় আর বলে আলু আড়তে নেই। তারা আমাদের নানা অজুহাত দেখায়। আমরা না কিনে পারি না। যদি আলু ছাড়া মাসখানেক চলতে পারতাম, তাহলে বাজারের আলু সড়কে ফেলে দিতে হতো ব্যবসায়ীদের। কিন্তু দুঃখের কথা আমরা সবাই এক না।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যবসায়ীরা একটার পর একটা জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও কোনো কাজে আসছে না। শুধু জরিমানা করছে বিধায় ব্যবসায়ীরা আরও বেশি সাহস পাচ্ছেন। সরকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট রোধ করতে যদি আরও বড় কোনো আইন করে তাহলে তারা সোজা হয়ে যাবে।”