• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদা মতো ডলার


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৪, ০৯:৫৬ পিএম
পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদা মতো ডলার
মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলের তালুকদার মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে ডলার কিনতে এসেছিলেন মো. সাইদুর রহমান। প্রয়োজন ১০০ ডলার। দাম কত হবে সেটা মুখ্য বিষয় নয়, তবে প্রয়োজন বেশি। কিন্তু, এক্সচেঞ্জ অপারেটর জানালেন কোনো ডলার নেই। বাজারে সংকট তৈরি হওয়ায় প্রয়োজন মতো ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দাম বেশি।

গণমাধ্যমের পরিচয় দিয়ে নানা আলাপ হয় মো. সাইদুর রহমানের মঙ্গে। এ প্রতিবেদককে জানালেন, ডলারের বাজারে কারসাজির কথা। নানা ক্ষোভও প্রকাশ করলেন তিনি।

মো. সাইদুল রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কদিন ধরে ডলারের জন্য এখানে-সেখানে ঘুরছি। ব্যাংকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। ডলারের চাহিদা এত বাড়ছে দুদিন পর নিতে চাইলেও দিতে অপারগতা প্রকাশ ব্যাংক করেন কর্তৃপক্ষরা। বলেন, আগেভাগেই ডলারের বিষয়টি শিউর হওয়া যায় না।”

মো. সাইদুল রহমান আরও বলেন, “খোলাবাজারে ডলারের কারসাজিতে দাম অনেক বেশি। যে যেভাবে পেরেছে ডলার মজুত করে রেখেছে। কার্ব মার্কেট পুরোপুরি কালোবাজারিরের দখলে। প্রতি ডলার ১৩০ টাকা দিলে নাকি একশ ডলার পাওয়া যাবে এমন ভরসা একজন দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন ফোন দিচ্ছি তিনি ফোনও রিসিভ করছেন না। বলছেন দু’দিন পর দিতে পারবেন।”

এ অবস্থা শুধু মো. সাইদুল রহমানের একার নয়। অধিকাংশ মানুষই প্রয়োজন মতো ডলার কিনতে পারছেন না। মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সামনে ডলার কিনতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও ডলার মিলছে না। হতাশা আর দুশ্চিন্তার ভর নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা। তবে চলমান সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম বৃদ্ধিতে সুফলের আশায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করছেন। কিন্তু ডলারের দাম বৃদ্ধিতে সংকটের বাজারে কতটুকু সুফল পাবে সাধারণ মানুষ; সে প্রশ্ন বরাবরই থেকেই যাচ্ছে।

গণমাধ্যমের পরিচয় গোপন করে উত্তরা, মতিঝিল, পল্টনের বেশ কয়েকটি ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ ঘুরে দেখেন এ প্রতিবেদক। তাতে দেখা যায়, ব্যাংকে ডলারের জন্য এসে ঘুরে যাচ্ছেন অনেকেই। মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর দু-একটিতে সামান্য ডলার মিললেও তাতে দাম বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতি ডলার ১১০ থেকে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। তবে খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১২১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনতে চাইলেও সংকট বলে দায় সারছেন এক্সচেঞ্জ অপারেটররা।

৮০ ডলার কিনতে এসে ৩০ ডলার পেয়েছেন আলিফ সরকার। তাও আবার অনেক কষ্টে। তার ডলারের জন্য তাকে অন্তত ছয়-সাতটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ ঘুরতে হয়েছে। তবে ৩০ ডলারে সন্তুষ্ট নন তিনি। প্রয়োজন আরও ৫০ ডলার। চিকিৎসার জন্য চলতি সপ্তাহে যাবেন দেশের বাইরে। ডলার না মিললে সমস্যায় পড়বেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান তিনি। ডলার সংকট সমাধানে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপে হাতেগোনা কয়টিতে সুফল এসেছে তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তার।

দীর্ঘদিন ধরে কার্ব মার্কেট কালোবাজারিদের দখলে। দখল নিয়ন্ত্রণে নানা সময় বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অনেকেই এসব অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। তবে এখনও পুরোপুরি কার্ব মার্কেট কালোবাজারিদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা এসেছে কালোবাজারিদের দখল থেকে কার্ব মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করার। তবে কোনো সুফল আসেনি। বরং দিন দিন সিন্ডিকেটের কবলে থাকা কার্ব মার্কেটে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে।

মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ডলার সংকট শুরু করেছে। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব খোলাবাজারে দৃশ্যমান। আবার খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে চাহিদা পূরণ করছে কিছু বেসরকারি ব্যাংক। ডলার না পেয়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবকিছু মিলিয়ে ডলার সংকটে ব্যবসায়ীদের মজুত কিংবা দাম বৃদ্ধিতে কোনো হাত নেই।

লোকমান নামের এক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ডলারের কারসাজিতে ব্যবসায়ীরা জড়িত না। যারা এমন ধারণা করেন সেটা ভুল হবে। ডলার মজুত করার কোনো উপায় নেই। প্রায় সময়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে জড়িত এসব ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করছেন। তবে যারা গ্রেপ্তার হচ্ছে তারা কিন্তু ব্যবসায়ী নয়। অধিকাংশ সিন্ডিকেটের সদস্য। যাদের কোনো অফিস নেই। খোলাবাজারে গোপনে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।”

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে লোকমান আরও বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম বৃদ্ধি করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত। তবে এমন সিদ্ধান্তে প্রবাসী আয়ে সুফল মিলবে। সংকটও কেটে যাবে। কেউ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে ডলার বিক্রি করলে সরকারের পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবেই ডলারের বাজারে স্বস্তি মিলবে।”

Link copied!