কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক হত্যার বিচার দাবি করেছেন দেশের ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। নিহত, আহত ও নির্যাতিত হওয়ার প্রতিটি ঘটনার স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (২৯ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকেরা’। এসব ঘটনা তদন্তের স্বার্থে তা জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে হওয়া জরুরি মনে করছেন তারা। সেজন্য জাতিসংঘকে এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, “আন্দোলনকালে শিক্ষার্থীসহ শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের নিহত, আহত ও নির্যাতিত হওয়ার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হতে হবে।”
নাগরিকরা আরও বলেন, “শুরু থেকেই সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও অরাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলনকে সরকারি দল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করতে চেয়েছে। অন্যদিকে বিরোধীপক্ষও ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতির নামে একে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।”
বিবৃতিতে তারা ছাত্র-জনতা হত্যা ও জনগণের সম্পত্তি বিনষ্টের নাশকতার পেছনে যেকোনো ধরনের অপরাজনীতির নিন্দা করছেন। তারা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন এ কারণে যে তাদের আশঙ্কা, সরকারি বাহিনী ও সরকারি দলের সংগঠনগুলোর আক্রমণে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক ব্যাপক, অনেক ভয়াবহ। ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমের ওপর সরকারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কারণে যা তারা জানতে পারছেন না।
বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, “এত অল্প সময়ে কোনো একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এমন বিপুলসংখ্যক হতাহতের নজির গত এক শ বছরের ইতিহাসে (মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ বাদ দিলে) এ দেশে তো বটেই, এই উপমহাদেশেও মিলবে না। এমন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা বা ধিক্কার ও প্রতিবাদের উপযুক্ত ভাষা তাদের জানা নেই। এই বিপুল প্রাণহানির দায় প্রধানত সরকারের।”
বিবৃতিতে যেসব দাবি তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো-
১. প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হতে হবে। প্রকৃত দোষী যে-ই হোক, যত উচ্চ পদাধিকারী বা যেকোনো দল–মতের হোক, তাদের আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণাসহ ঘটনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কত লোক, শিক্ষার্থী, কিশোর-কিশোরী নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তার প্রকৃত সংখ্যা, নাম-পরিচয় সরকারকে অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে।
৩. প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসার পূর্ণ দায়িত্ব ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
৪. নির্বিচার গ্রেপ্তার, আটক ও আটক রেখে বিবৃতি আদায়, দমন–পীড়ন, শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, পুলিশ ও র্যাবের লাগামহীন হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৫. কারফিউ তুলে নিতে হবে। অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে ইন্টারনেটের ওপর সব সরকারি নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটাতে হবে। ভিন্নমতের মানুষকে হয়রানি ও তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক শোক সভা আয়োজন করতে দেশের সব বিশিষ্ট ও দায়িত্বশীল নাগরিকের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, হামিদা হোসেন, খুশী কবির, রাশেদা কে চৌধূরী, আইনজ্ঞ ও সংবিধানবিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ।