ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে জমে উঠতে শুরু করেছে বেচাকেনা। তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে পছন্দের পোশাক কিনতে পরিবার নিয়ে মার্কেটে ঘুরে বেরাচ্ছেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা জানান, ঈদকে ঘিরে এবার অধিকাংশ পোশাকের দাম বেড়েছে। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিসের দাম কমানোর জন্য সাধারণ মানুষ আওয়াজ তুললেও কোনো সুফল আসেনি। তাই সাধ্য অনুযায়ী আগের তুলনায় কম পোশাক কিনছেন ক্রেতারা।
আমেনা বেগম নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পোশাকের দাম নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে বেশি তর্ক করে কি লাভ। তারাও তো অন্য জায়গায় থেকে বেশি দামে কিনে আনছেন। তাদেরও তো ব্যবসা করতে হবে। আর পোশাকের দামের দিকে সরকার যদি একটু নজর দিত তাহলে এত বেশি দাম বাড়ত না। সর্বত্রই সাধারণ মানুষ অসহায়, তাই তর্কে না জড়িয়ে সাধ্যের মধ্যে পোশাক কেনার চেষ্টা করছি।”
আমেনা বেগম আরও বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ। বেশি পোশাক কেনা সম্ভব হয় না। আগে ছয় মাসে একবার মার্কেটে আসা হতো, এখন হয়তো এক বছরে একবার আসা হয়। তাই আমার মতো মধ্যবিত্ত অনেক মানুষেরই পোশাক কেনার ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুটপাত।”
সরেজমিনে রাজধানীর নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা শপিং মল, উত্তরা আজমেরি কমপ্লেক্সসহ আরও কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, পোশাক কিনতে সকাল থেকেই মার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। নিজের পছন্দের পোশাক ক্রয়ের জন্য তীব্র গরমের মধ্যেই এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
আবার অনেকে গরম সহ্য করতে না পেরে বসার স্থানে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছেন। তবে মার্কেটের চেয়ে ফুটপাতেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় বেশি লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখছেন না বিক্রেতারা। পোশাকে ডিসকাউন্ট থেকে শুরু করে দামদর নিয়ে বেশি ঝামেলায় জড়াচ্ছেন না তারা। তবে দাম বাড়তির বিষয়ে সহনীয় বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, ডলার সংকট, এলসি বন্ধসহ নানা কারণে গতবারের চেয়ে এবার পোশাক আমদানিতে খরচ বেড়েছে। এরপর পরিবহন খরচ বাড়ায় পোশাকের দাম বেড়েছে। সীমিত লাভে পোশাক বিক্রি করলে ক্রেতাদের কাছে সেটা অস্বাভাবিক মনে হয়।
উত্তরা আজমেরি কমপ্লেক্সের আব্দুল হেলাল নামের এক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গতবার ছোটদের ভালো মানের একটা প্যান্ট আমরা কিনতাম ৫০০ টাকায়। কিন্তু এবার একই প্যান্ট ৭০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাহলে সীমিত লাভে বিক্রি করলে দাম কত গিয়ে দাঁড়াবে। একটা প্যান্টে আমরা যদি ১০০-১৫০ টাকা লাভই করতে না পারি, তাহলে ব্যবসা করে লাভ কী? দোকান ভাড়া আছে, কর্মচারীদের বেতন আছে, আমাদের সংসার আছে, কারেন্ট বিলসহ আরও খরচ আছে।”
এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, “গত ছয় মাস ধরে পোশাক ব্যবসায় ব্যবসায়ীরা সুবিধা করতে পারছেন না। সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। তারা মার্কেটে এসে বেশি দামে পোশাক কিনতে চায় না। তাই সীমিত দামের মধ্যে পোশাক কেনেন। আবার কেউ কেউ ফুটপাত থেকে কম দামে পোশাক কিনছেন। মার্কেটে লোকজনের সংখ্যা বেশি দেখা গেলেও এগুলোর মধ্যে ক্রেতা কম। বাকি যারা আছে তারা শুধু দাম দেখে আর পোশাক দেখে চলে যায়।”
ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, ছোটদের জিন্স প্যান্ট মার্কেটে ৫০০-৮০০ টাকা, শার্ট ৩০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়দের জিন্স প্যান্ট ৮০০-২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবারও কোনো কোনো প্যান্ট ৩ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছেলেদের পাঞ্জাবি, মেয়েদের থ্রি-পিস, শাড়িসহ আরও আনুষঙ্গিক পোশাকে দাম গতবারের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
এদিকে মার্কেটে পোশাকের বাড়তি দামের কারণে ফুটপাতে ভিড় করছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। সেখান থেকে নিজেদের সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক কিনছেন ক্রেতারা।
মার্কেটে ঘোরাঘুরি শেষে গুলিস্তান ফুটপাতে পোশাক কিনতে এসেছেন শহিদুল ইসলাম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী। সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে আলাপকালে শহিদুল বলেন, “অনেক ঘুরাঘুরি করলাম মার্কেটে। কিন্তু পছন্দের পোশাকের সঙ্গে দামদরে মেলে না। ব্যবসায়ীদের সীমিত লাভে পোশাক কিনতে চাইলেও তারা বেশি বেশি করে দাম হাঁকাচ্ছেন। সন্তানের জন্য পোশাক কিনেছি, আমার পোশাক কিনতে ফুটপাতে আসলাম।”
শহিদুল আরও বলেন, “মার্কেটে যে শার্ট ১৫০০ টাকা, ফুটপাতে একই শার্ট ৭০০-৮০০ টাকা। খুব বেশি হলে ৯০০ টাকায় পাওয়া যাবে। ফুটপাতে তাও দামদর করে কেনা যায়। কিন্তু মার্কেটে সেই সুযোগ নেই। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সরকার মাঠে থাকে, তবে মার্কেট মনিটরিং করা জন্য যদি সরকারের লোক থাকত, তাহলে আমাদের মতো মানুষ পোশাক কিনে শান্তি পেত।”