নির্বাচন যত বিলম্ব হবে দেশের সমস্যা তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
জুলাই আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ফটোসাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে আহত সাংবাদিকদের আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, “আমরা জনগণের অধিকার যত দ্রুত জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারব, তত দ্রুত দেশকে ধবংসের দ্বারপ্রান্তে থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো বলে বিশ্বাস করি। আর নির্বাচন যত দেরি হবে তত বেশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের ডালপালা বাড়তে থাকবে। এই দেশ থেকে যারা পালিয়ে গেছে তারা দেশের মানুষের বিপুল পরিমান সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। অবশ্যই তারা সেই সম্পদগুলো ষড়যন্ত্রের পেছনে ব্যয় করবে। তাই দেশকে যদি একটি স্থিতিশীলতায় আনতে হয়, দেশকে যদি ঐক্যবদ্ধভাবে ধরে রাখতে হয় তবে অবশ্যই জনগণের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।”
দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “এদেশের মূল মালিক জনগণ। এই দেশ নিয়ে কী হবে না হবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের। সমগ্র পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলতে যা বুঝায় সেটি হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন- তারা কী চায়, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার জবাব দিয়ে থাকে তারা দেশ সম্পর্কে কি বলতে চায়, রাজনীতিবিদকে তারা কী বলতে চায় সেটাও তারা নির্বাচনের মাধ্যমে বলে থাকে।”
জনগণের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি ছাড়া কেন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয়- এর ব্যাখ্যা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, যাদের সঙ্গে জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে তারাই কেবল জনগণের কথা তুলে ধরতে পারবেন। তারাই কেবল আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে দেশকে সামনের দিকে পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে রাজনৈতিক অধিকার আগে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা না পেলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যাবে না। রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হলে ভোটের অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
যারা আন্দোলনকে সফল করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “কয়েকদিন আগে আমরা দেখেছি, আহতদের বেশ কিছু সদস্য রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন, কেন? তারা সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। জুলাই-আগস্ট মাসে যারা আন্দোলনকে সফল করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। এই ঘটনা একবার না একাধিকবার ঘটেছে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমার প্রশ্ন, আমরা যদি প্রতিদিনের কিছু কাজ করার চেষ্টা করি তাহলে কি সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে অধিকাংশ মানুষের কাছে সহযোগিতা পৌঁছানো সম্ভব না? অবশ্যই সম্ভব। তাই সংস্কারকে সফল করার জন্যই এমন মানুষের দরকার যারা সরাসরিভাবে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তা না হলে কোনো সংস্কারই সফল করা সম্ভব হবে না।”
সংস্কারের প্রস্তাবনা দুবছর আগে এই দেশের রাজনীতিবিদরাই জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সংস্কারের প্রস্তাবনা দুবছর আগে এই দেশের রাজনীতিবিদরাই মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। কাজেই এই দেশে প্রকৃত সংস্কার যদি করতে হয় রাজনীতিবিদদের মাধ্যমেই করতে হবে। অবশ্যই রাজনীতিবিদদের বাইরে দেশে বহু মানুষ আছেন, বহু শ্রেণি পেশার মানুষ আছেন, বুদ্ধিজীবীরা আছেন, আইনজীবীরা আছেন, সিভিল সোসাইটির মানুষ আছেন, আমরা অবশ্যই তাদের পরামর্শ নেব। তার ভিত্তিতেই আমরা ধীরে ধীরে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”
তারেক রহমান বলেন, “শুধু ভোটের অধিকার নিশ্চিত করলে চলবে না, ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ আমি একজন ভোটার, আমার যেমন ভোটের অধিকার থাকবে তেমনি ভোট প্রয়োগে যেন স্বাধীন ও নির্ভয়ে আমাদের পছন্দের প্রতিনিধিকে ভোট দিতে পারি সে অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে।”
সংস্কারের প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, “তাদের ৩১ দফার মূল কথা- বৈষম্যহীন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যেই বাংলাদেশের প্রত্যাশা প্রত্যেকটি মানুষের। একটি বাংলাদেশ যেখানে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার থাকবে, যেখানে মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকবে। কারণ একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা না যায় সব কিছুই নষ্ট হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “মানুষের কাছে গেলে একটি কথা বেরিয়ে আসে- আমাদের সমস্যার সমাধান কী হবে? নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিদিন যেভাবে উঠছে-নামছে সেটি মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে গেছে। মানুষের জানার ইচ্ছা এ সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে? এই অবস্থা থেকে উত্তরণে একটি ‘জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার’ প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই।”
তারেক রহমান বলেন, “দেশের অনেক মৌলিক সমস্যা আছে যার একটি বেসিক সমাধানের পরিকল্পনা আমাদের ৩১ দফায় দিয়েছি। আমরা যদি মানুষের সমস্যার সমাধান করতে না পারি তাহলে উচ্চ কক্ষ বলুন, এক ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবে না বলুন, আরও যথাযথ ক্ষমতার ভারসাম্য যতই যাই বলি না কেনো দিন শেষে মানুষের কোনো উপকার হবে না।”
এসময় গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার আলোকচিত্র সাংবাদিকদের প্রতি সহমর্মিতা এবং সন্মান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ সম্পাদক আশরাফউদ্দিন বকুল, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন, সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার, জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ ও তারিফ রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।