নতুন বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যেই স্ব স্ব দলের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে নির্বাচনমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। বছরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে করা হয়েছে নির্বাচনী জনসভা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই সকল নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) রংপুরের তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জে নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এর আগে ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী, ১১ মার্চ ময়মনসিংহ, ১৩ নভেম্বর খুলনা, ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ২ আগস্ট রংপুর, ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার, ২০ ডিসেম্বর সিলেটে নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। গত ২১ ডিসেম্বর পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা ও খাগড়াছড়ি নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রতিটি সমাবেশে বর্তমান সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। দলের প্রধানের জনসভার মধ্যদিয়ে চাঙ্গা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি।
তৃণমূলের সফর করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা
নির্বাচনের বছরে ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল গঠনে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তৃণমূলের সৃষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করণ এবং তা সমাধানে জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের সফর করেছেন দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক, আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভাসহ নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারা। তৃণমূল সফরের মধ্য দিয়ে তৈরি করেন সাংগঠনিক রিপোর্ট। এছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা।
তৃণমূল নেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয় গণভবন
দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব, কোন্দল, বিভেদ, বিভাজন ও বলয় ভিত্তিক রাজনীতি ছেড়ে দলীয় নেতাকর্মীরা যেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষ ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করেন, সেজন্য দলের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের ডাকা হয় প্রধানমন্ত্রীর সরকার বাসভবন গণভবনে। তৃণমূল থেকে আগত নেতাদের পদচারণা মুখরিত হয়ে ওঠে গণভবন। আগত নেতাদের ভেদাভেদ ভুলে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নির্বাচনের মাঠে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেন তিনি।
শক্ত হাতে আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা
খাদ্যসামগ্রীর ঊর্ধ্বমুখী, ডলার সংকট, মার্কিন ভিসানীতি, স্যাংশন ও নির্বাচন কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক চাপ ছিল বছরজুড়েই। তবে এসব সমস্যা শক্ত হাতেই মোকাবিলা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কঠোর পরিশ্রম ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সব বাধা ডিঙিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
ভোটের মাঠে নৌকার প্রার্থীরা
নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন নিয়ে ইতিমধ্যেই ভোটযুদ্ধে নেমেছে আওয়ামী লীগের ২৬৩ জন প্রার্থী। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে করছেন ভোট প্রার্থনা তারা। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও তাদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে নির্বাচনী পরিবেশ। তবে বিএনপি বিহীন নির্বাচনে শতাধিক আসনে নৌকার প্রার্থীদের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কোথাও কোথাও সংঘাত সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
রাজনীতির মাঠ ছিল আওয়ামী লীগের দখলে
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছরের শুরু থেকে সরকারবিরোধী নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব ভূমিকা পালন করেছে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্ররা। ঢাকাসহ সারা দেশেই সভা-সমাবেশ করেছে তারা। বিএনপি এসব কর্মসূচি সরাসরি বাধা দেয়নি আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপি যেন আন্দোলনের নামে আগুন-সন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও ক্ষমতা দখল করতে না পারে সেজন্য সতর্ক এবং সজাগ ছিল আওয়ামী লীগ। শান্তি সমাবেশ, উন্নয়ন সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে সারা বছরই রাজনীতির মাঠ দখলে রেখেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।