রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ধাপে ধাপে অবরোধ-হরতাল আর ধ্বংসের আগুন নিঃস্ব করে দিচ্ছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের। ধ্বংস করা হচ্ছে দেশের পরিবহন খাতকে।
জঘন্য এই কর্মসূচিতে আয়-রোজগার যেমন কমেছে, তেমনি আতঙ্ক বাড়িয়েছে অগ্নি সংযোগের ঘটনাগুলো। চোরাগোপ্তা এসব অগ্নিসংযোগে শুধু পরিবহন পুড়ছে না, পুড়ে মারা হচ্ছে শ্রমিকদেরও। দুঃসহ এই পরিস্থিতিতে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আরজি এমন ভয়ানক কর্মসূচি থেকে যেন তারা বেরিয়ে আসেন।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো ফায়ার সার্ভিসের এক তথ্যে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ থেকে শুরু করে ২০ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের হরতাল কর্মসূচির শেষ দিন পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা সারা দেশে ১৯৭টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৮৫টি যানবাহন পুড়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশের বেশি পুড়ছে যাত্রীবাহী বাস। প্রতিদিন গড়ে পুড়েছে ৪টির বেশি।
ফায়ার সার্ভিসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানা যায়, এসব ঘটনায় ১৫টি স্থাপনাও পুড়েছে। পুড়ে যাওয়া যানবাহনের মধ্যে ১১৮টি যাত্রীবাহী বাস, ২৬টি ট্রাক, ১৩টি কাভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল, ২টি প্রাইভেট কার, ৩টি মাইক্রোবাস, ৩টি পিকআপ, ৩টি সিএনজি, ২টি ট্রেন, ১টি নছিমন (৩ চাকার বাহন), ৩টি লেগুনা, ১টি ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়ি, ১টি পুলিশের গাড়ি এবং ১টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
এছাড়া স্থাপনাগুলোর মধ্যে পুড়েছে ৫টি বিএনপির কার্যালয়, ১টি আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ১টি পুলিশ বক্স, ১টি কাউন্সিলর কার্যালয়, ২টি বিদ্যুতের কার্যালয়, ১টি বাস কাউন্টার, ২টি শোরুম এবং আরও ২টি স্থাপনার নাম উল্লেখ নেই।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের দাবি, রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কর্তৃক এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
কথা হয় মন্টু মিয়া নামের এক বাস চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বর্তমানে আতঙ্কের মধ্যে আছি। আয়-রোজগার অনেক কম। আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। বাসে আগুন দিলে নিজের জীবন নিয়ে টানাটানি। প্রতিদিন এত বাস পুড়ছে বলার বাইরে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমরা প্রত্যাশা করি, এসব যেন বন্ধ করা হয়। তা না হলে আমরা বাঁচতে পারব না।”
হোসেন নামের এক বাসচালক বলেন, “বাস নিয়ে যখন রাস্তায় নামি। তখন আতঙ্কে থাকতে হয়, কখন যে কি হয়। সব সময় মনে হয়, সুস্থভাবে বের হইছি। সুস্থভাবে ফিরতে পারব কি না? কবে এসব বন্ধ হবে, আর আয় রোজগার বাড়বে। সে কথাই ভাবতে হয়।”
এসব বিষয়ে কথা হয় মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেকের সঙ্গে।
তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আন্দোলন করার অধিকার যেমন সকলের আছে। তেমনই মালিক হিসাবে আমারও গাড়ি চালানোর অধিকার রয়েছে। অবরোধ-হরতাল কিংবা গার্মেন্টস সেক্টরে (খাত) আন্দোলন। সব আন্দোলনেই, অফিস, আদালত, বাজার-ঘাট চলতেছে। কিন্তু আক্রোশ শুধু পরিবহণনর উপর। এর কারণ কি? এই খাতের মানুষ, দিন এনে দিন খায়। তাই যারা এসব (অগ্নিকাণ্ড) ঘটাচ্ছেন তাদের কাছে অনুরোধ, আন্দোলনের নামে পরিবহন খাত যেন জিম্মি না হয়।”