ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারেও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে কারাপণ্য। মেলা শুরুর পর থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে কারাপণ্য প্যাভিলিয়নে বন্দীদের তৈরি হস্তশিল্পে। যেমন দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে, তেমনি বিক্রিও বেড়েছে বলেছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশ-বেত দিয়ে কারাবন্দিরা তৈরি করেছেন নানা ধরনের গৃহস্থালিপণ্য, পাট-চামড়া দিয়েও বুনেছেন বাহারি পণ্য। যা বিক্রি হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়। টেকসই ও ভিন্নতা থাকায় এসব পণ্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে বাঁশ ও বেতের বুননে তৈরি মোড়া, পাটের তৈরি টেবিল-চেয়ার ও শো-পিস। এছাড়াও আছে জুতা, বিছানার চাদর, পাপোশ, কুলাসহ গৃহসজ্জার নানা পণ্যের সম্ভার। এসব পণ্যের বেচা-বিক্রিও বেশ ভালো। আর এসব দৃষ্টিনন্দন পণ্য তৈরি করেছেন সশ্রম কারাবন্দিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কারাবন্দিদের হাতে তৈরি এসব পণ্য মেলা ছাড়াও কারাগারের ডিসপ্লেতে প্রদশর্নী করা থাকে। সাধারণ মানুষ চাইলে সেখান থেকে কিনতে পারেন।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, হস্তশিল্প তৈরির জন্য প্রথমে কারাবন্দিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর বাহির থেকে সরঞ্জাম এনে কাজ শুরু হয়। এই কাজ ১২ মাসেই চলমান থাকে। তৈরি হওয়া এসব পণ্য দেশের যে কারাগারগুলোতে প্রদর্শনী কেন্দ্র আছে সেগুলোতে প্রদর্শনী করা হয়। কারাবন্দিদের হাতে তৈরি হস্তশিল্পের চাহিদা বাড়ায় বাণিজ্যমেলায় দৈনিক ২ লাখের বেশি বিক্রি হয়। এর লাভের ৫০ শতাংশ পায় কারাবন্দিরা।
জানা গেছে, দেশের ৩৮টি কারাগারের কয়েদিরা বুনছেন হাতে তৈরি এসব পণ্য। আর ২০১৮ সাল থেকে বাণিজ্যমেলায় অংশ নিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে কারাপণ্য প্যাভিলিয়নে কর্মরত ডেপুটি জেলার জামাল সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা হস্তশিল্পে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। দর্শনার্থীরা প্যাভিলিয়নে এসে কারাবন্দিদের হাতে তৈরি হস্তশিল্প কিনছেন।”
ডেপুটি জেলার আরও বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায় কারাবন্দিরা ভবিষ্যতে আলোর পথে ফিরে আসতে সহায়তা করবে বলে আমি মনে করি। লাভের অংশ থেকে যে অর্থ কারাবন্দিরা পায়, কারাবন্দিরা চাইলে সে অর্থ দিয়ে কারাগারের মধ্যে খরচ করতে পারবে। পাশাপাশি চাইলে সে অর্থ দিয়ে আইনজীবী কিংবা পরিবারকেও দিতে পারবেন।”
এদিকে কারাবন্দিদের হাতে তৈরি হওয়া হস্তশিল্পে কিনতে পেরে খুবই আনন্দিত সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, এসব পণ্যের জন্য নির্ধারিত কোনো মার্কেট থাকলে সারা বছরই চাহিদা বাড়বে।
সাজ্জাদ নামের এক দর্শনার্থী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কারাবন্দিদের পণ্য কিনতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমার ক্রয়ের অংশ থেকে তারা যে অর্থ পাবে সেটা ভাবলেই মনে আনন্দ চলে আসে।”
ওই দর্শনার্থী আরও বলেন, “এমন হস্তশিল্প বানানোর ফলে কারাগারে কাজের ব্যস্ততার মধ্যে থেকে অপরাধের চিন্তাভাবনা থেকে সহজেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশা ব্যক্ত করবেন তারা।”