• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধাজ্ঞা, জেলায় জেলায় সতর্কতা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২, ১২:১৫ পিএম
পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধাজ্ঞা, জেলায় জেলায় সতর্কতা

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত উত্তাল রয়েছে। সমুদ্রের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১০টায় বিষয়টি জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ মিয়া।

এদিকে বৈরী আবহাওয়া ও ঘূর্ণিঝড়ের ফলে পর্যটকদের সমুদ্রসৈকতে নামতে নিরুৎসাহিত করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফ গার্ডের সদস্যরা।

ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটক নামার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মো. বিল্লাল উদ্দিন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই সমুদ্রে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও নিষেধাজ্ঞা না নেমে যারা সমুদ্রসৈকতে নামছেন, তাদের আমরা উঠিয়ে দিচ্ছি। অলরেডি ৬ নম্বর সংকেত শুরু হয়ে গেছে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।”

 

মোংলায় ৭ নম্বর বিপৎসংকেত

মোংলায় ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখানো হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় এই সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া অফিস। এদিকে এই বিপৎসংকেতে মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠা-নামার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ের কারণে গাড়িসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক জাহাজ এই বন্দরে ঢুকতে পারেনি। পণ্য খালাস শেষ হওয়ার পরও তিনটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি।

সিত্রাংয়ের কারণে চরম আতঙ্কে রয়েছেন মোংলাসহ সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জোয়ারের উচ্চতা ছাপিয়ে মোংলা ও পশুর নদে পানি বেড়েছে পাঁচ থেকে সাত ফুট।

মোংলা উপজেলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপটি সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ বাড়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে। যদি প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার হয় তাহলে এটি সাইক্লোনে রূপ নেবে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোরের দিকে সিত্রাং বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ইতোমধ্যে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) কাজ করছে। এ ছাড়া ১০৩টি সাইক্লোন শেল্টারে লোকজন আশ্রয় নেওয়া শুরু করছে। এ ছাড়া তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উপজেলা, পৌরসভা এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে পৃথক তিনটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।

এদিকে উপকূলে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে একই দিনে সূর্যগ্রহণের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুট পানি বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, “বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে পাঁচ থেকে পাঁচ সাত ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য উপকূলের জনপদকে সতর্ক হতে বলা হয়েছে।”

বরগুনা

সাগর-তীরবর্তী জেলা বরগুনা। প্রতিবছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে এ জেলায়। অথচ দেশের সর্ব দক্ষিণের এ জেলায় এখনো নির্মাণ হয়নি আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট কোনো অফিস।

ফলে সঠিক সময়ে সঠিক পূর্বাভাস না পেয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বারবার বিপর্যস্ত হচ্ছে এই জনপদ। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ, জেলে ও কৃষকরা।

অভিযোগ রয়েছে, বিগত দিনের ঘূর্ণিঝড় সিডর, মহাসেন, আইলা, রোয়ানু ও মোরার সময় আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে এখানে অমিল ছিল ঝড়ের গতি ও স্থান পরিবর্তনের।

জেলার সচেতন মহল বলছেন, বিগত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের সময় আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে অনেক গরমিল ছিল। ফলে বন্যার গতি ও স্থান পরিবর্তনের প্রভাবটা পড়েছে গোটা উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণের ওপর।

জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সঠিক সময়ে আবহাওয়ার সংকেত না পাওয়ায় গভীর সাগরে থাকা জেলেদের তথ্য দিতে পারি না। তাই ঝড়ের কবলে পড়ে প্রতিবছর বহু জেলে ট্রলারডুবিতে মারা যাচ্ছেন।

জেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপপরিচালক কিশোর কুমার সরদার বলেন, “আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট কোনো অফিস না থাকায় জনগণের তোপের মুখে পড়তে হয় আমাদের। আবহাওয়ার তথ্য ঢাকা থেকে সংগ্রহ করতে যে সময় লেগে যায় ততক্ষণে আবহাওয়া অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়।”

জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, “বরগুনা একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। প্রতিবছরই বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে এ অঞ্চলে। জানমালের অনেক ক্ষতি হয়। তাই এখানে একটি স্থানীয় আবহাওয়া অফিস স্থাপন করা প্রয়োজন। বিষয়টি দ্রুত সরকারের নজরে আনা হবে।”

নোয়াখালীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন মানুষ।  

সোমবার ভোর থেকে বিভিন্ন উপজেলায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে দুর্যোগ মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরি সভা করেছে।

হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নিঝুম দ্বীপে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। সোমবার সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের বান্ধাখালী, মোল্লা গ্রাম, মুন্সি গ্রাম ও মদিনা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম হোসেন বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৭ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী উত্তাল থাকায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ-চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে মাইকিংয়ের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় হাতিয়ায় ২৪২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৩ হাজার ৫৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে ৮৯ মিলিমিটার পর্যন্ত। অর্থাৎ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ৭-৮ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
 

Link copied!