সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর শেষে ফিরে যাওয়ার পরপরই দেশের রাজনীতির অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তিনি কথা বলেছেন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন, শ্রম অধিকার এবং বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার বিষয়ে। লু বাংলাদেশ সফর শেষে চলে যাওয়ার পরপরই
শুরু হয়েছে লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ। আর তার বক্তব্য নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুয়ের বক্তব্যে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা মনে করছেন, ডোনাল্ড লু সরকারের বেশির ভাগ কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন। ফলে তার এ সফর পজিটিভলি দেখছেন তারা। তাই ফুরফুরে মেজাজে আছে আওয়ামী লীগ।
দলের শীর্ষ নেতারা বলেন, বিএনপি ভেবেছিল, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে এসে শুধু র্যাব নয়, আরও বেশ কিছু স্যাংশন দেবেন। কিন্তু সেটি হয়নি। বরং লু গণতন্ত্র, নির্বাচন, শ্রম অধিকার এবং বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার, আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। র্যাবের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশংসা করেছেন। র্যাবের বিরুদ্ধে যে স্যাংশন দেওয়া আছে, সেটি তুলে নেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন তারা। লু বুঝতে পেরেছেন, বিএনপি যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা বলছে, তা মোটেও সত্য নয়। তারা ভেবেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়েও লু কথা বলবেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, একটি গ্রহণযোগ্য, সব দলের উপস্থিতিতে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
আওয়ামী লীগে নেতারা বলেছেন, এতে বিএনপি হতাশ হয়েছে। বিএনপির আমলেই র্যাবের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সময় ৭৪৩টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। তারা বলছেন, বিদেশনির্ভর বিএনপি নেতারা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুয়ের সঙ্গে দেখা করার অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লু তাদের সাক্ষাৎ দেননি। ডোনাল্ড লু শনিবার ঢাকায় নেমেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বাসভবনে যান। এ সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার শনিবার রাতে এবং রোববার সকালে মিলিয়ে মোট দুই দফা কথা হয়। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেন। এর বাইরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সব বৈঠকেই ডোনাল্ড লু মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং শ্রম অধিকার বিষয়ে বলেন, কোথাও মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও কথা বলার স্বাধীনতা নিয়ে ব্যত্যয় ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র কথা বলে এবং সুপারিশ করে থাকে। এসব ইস্যুতে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক দৃঢ় করতেই তার এ সফর।
নির্বাচন নিয়েও কথা বলেছেন ডোনাল্ড লু। বাংলাদেশও আশ্বস্ত করেছে যে আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। ডোনাল্ড লু বলছেন, বিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে সমাবেশ করার অধিকার দিতে হবে এবং কথা বলার মুক্ত পরিবেশ থাকতে হবে। র্যাব নিয়ে ডোনাল্ড লু বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর কাজ হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে জিসোমিয়া এবং আকসা চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে তিনি যা চেয়েছেন তার সবই সরকার চায়।
মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনে বিএনপি অসুস্থ হয়ে গেছে। বিএনপির হতাশা থেকে অসুস্থতার শুরু হয়েছে। আসল নেতারা হাসপাতালে। পাতি নেতারা বলছে, সুনামি নামিয়ে সরকার হটাবে। আন্দোলনের সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কথা বলে নদীর ঢেউও তুলতে পারল না।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপির রাজনীতি জনমুখী নয়, বিদেশমুখী। তারা রাতের অন্ধকারে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ছুটে যাওয়া, তাদের পদলেহন করার নীতি গ্রহণ করেছে। তবে এসব করে কোনো লাভ হয়নি, সেটি তারা বুঝেছে।”
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “সম্প্রতি মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে বলে গেছেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর কাজের গুণগত উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করতে চায়, প্রশিক্ষণ দিতে চায়। এতে বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এটি সরকারের জন্য ইতিবাচক দিক। তিনি র্যাবের প্রশংসা করেছেন। এমনকি র্যাবের বিরুদ্ধে দেওয়া স্যাংশন তুলে নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন। বিএনপি চেয়েছিল, দেশে আরও কিছু স্যাংশন দেবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ডোনাল্ড লু দেশের উন্নয়নসহ প্রতিটি বিষয়ের প্রশংসা করেছেন। এমনকি বিএনপির সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎও করেননি।”
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডোনাল্ড লু মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন, শ্রম অধিকারে এবং বাক-স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি যা চেয়েছেন, সেটি তো আমাদেরও চাওয়া। তবে বিএনপিসহ যারা বিদেশনির্ভর রাজনীতি করতে চান, তারা ডোনাল্ড লুয়ের বক্তব্যে হতাশ হয়েছেন।”