মূল সড়কের বাইরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপেসওয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশ বিমানবন্দর-বনানী-তেজগাঁও সাধারণের যান চলাচল শুরু হয়েছে রোববার (৩ আগস্ট) ভোর ৬টা থেকে। সিগন্যাল ছাড়া রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট যাওয়া যাবে এই সড়কের মাধ্যমে। যান চলাচল শুরুর প্রথম দিনে ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৫৪ গাড়ি যাতায়াত করেছে এই উড়াল সেতুতে। যাতে টোল আদায় হয়েছে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫২৯ টাকা।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার যানজট নিরসনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি টোল দিয়ে উড়াল সড়ক পার হন। তবে সাধারণ যানবাহনের জন্য রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে এক্সপ্রেসওয়েটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে কাওলা ও ফার্মগেট অংশে দেখা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা প্রান্তে প্রাইভেট কার, মাইক্রো ও কয়েকটি ছোট পিকআপ ভ্যান এর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উড়াল সড়ক দিয়ে কোনও গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কিছু মোটরসাইকেল ও সাইকেলচালক এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে চাইলে নিরাপত্তাবাহিনী তাদের নিচের পথ দিয়ে চলাচল করার কথা জানান। আর কোনও সিগন্যাল ছাড়া সরাসরি ফার্মগেট এলাকায় নেমে উচ্ছ্বসিত দেখা যায় গাড়ি চালক ও যাত্রীদের।
কাওলা থেকে উড়াল সেতুতে ১২ মিনিটে ফার্মগেটে এসে এক প্রাইভেট কার চালক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “নতুন রাস্তা দিয়ে ২ ঘণ্টার রাস্তা ১২ মিনিটে আসতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে। গতকালকেও তিনঘণ্টা জ্যাম ঠেলে আসতে হয়েছে। এর অবসান হয়েছে আজ থেকে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার জন্য। এমন আরও প্রকল্প যেন হাতে নেয়। তাহলে সরকারের সুনাম হবে। এ ছাড়া জনগণেরও উপকার হবে।”
মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করেন জামাল মিয়া। সকালে কাওলা অংশ দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে চেয়েছিলেন তিনি, তবে মোটরসাইকেল চলার অনুমতি না থাকায় পুলিশি বাধায় তিনি যেতে পারেননি। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় মোটরসাইকেল না যেতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ঠিক হয়নি। কারণ রাজধানীতে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহার করে, তারা যদি উড়াল সড়ক ব্যবহার না করে সেই নিচের সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে তাহলে লাভ কি?”
এয়ারপোর্ট থেকে কোনও সিগন্যাল ছাড়া ফার্মগেট এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে আসেন সামিউল হক। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “উত্তরা থেকে মোহাম্মদপুর অফিসে যাচ্ছি। খুব দ্রুত আসলাম আলহামদুলিল্লাহ। খুব ভালো লাগছে। বনানী মহাখালীতে এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকা লাগবে না আমাদের।”
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গতকাল প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর আজকে সকাল ৬ টা থেকে উড়াল সড়ক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। যান চলাচল শুরুর প্রথম ১১ ঘণ্টায় ৬টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৫৪ গাড়ি যাতায়াত করেছে এই উড়াল সেতুতে। যাতে টোল আদায় হয়েছে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫২৯ টাকা।”
তিনি আরও বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দ্রুতগতিতে ও নিরাপদে যাতে গাড়ি চলাচল করতে পারে, সেজন্য দুই ও তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে উড়াল সড়কে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও হালকা ট্রাককে ৮০ টাকা, বাস ও মিনিবাস ১৬০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৩২০ টাকা এবং ভারী ট্রাক বা ট্রেইলর ৪০০ টাকা টোল দিয়ে যাতায়াত করছে। উড়াল সড়কে মোটরসাইকেল ও থ্রী হুইলার যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি প্রবেশমুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
এক্সপ্রেসওয়ের কর্তৃপক্ষ জানায়, কাওলা প্রান্তের টোল প্লাজা দিয়ে ৬ হাজার ৬১৬টি গাড়ি, কুড়িল দিয়ে ১ হাজার ১৯৮টি গাড়ি, বনানী দিয়ে ১ হাজার ৯১টি গাড়ি এবং তেজগাঁও এক হাজার ৯৪৯টি গাড়ি রোববার বিকেল ৫টা নাগাদ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পার হয়েছে। এর মাধ্যমে উল্লেখিত সময়ে মোট ১০ হাজার ৮৫৪ টি গাড়ি এলিভেটেড সড়কে যাতায়াত করল।
জানা যায়, বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এই অংশটির মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে এই অংশের যানবাহন ওঠানামার ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে ১৩টি খুলে দেওয়া হয়েছে। বনানী ও মহাখালীর র্যাম্প নির্মাণ শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং এইচএসআইএ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে যানবাহনের সময় লাগবে ১০ মিনিট।