আজ ২৪ সেপ্টেস্বর, মীনা দিবস। শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিতকরণ ও ঝরে পড়া রোধের অঙ্গীকার নিয়ে ইউনিসেফ ঘোষিত দিবসটি ১৯৯৮ সাল থেকে প্রতিবছর দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্যাপিত হয়। তবে বাংলাদেশে এ বছর ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার হওয়ায় শ্রেণি কার্যক্রম ও দাপ্তরিক কাজের বিঘ্ন না ঘটার সুবিধার্থে ২৩ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শনিবার ‘মীনা দিবস-২০২৩’ উদযাপন করেছে।
এ বছর মীনা দিবসের থিম ‘স্মার্ট শিশু স্মার্ট বাংলাদেশ’ এবং প্রতিপাদ্য ‘স্মার্ট বিদ্যালয় আর স্মার্ট শিক্ষা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দীক্ষা’। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের বড় অর্জনগুলোর একটি ‘মীনা’, যেটি একটি কার্টুন চরিত্র। মীনা একটি উচ্ছল, প্রাণবন্ত ও সাহসী মেয়ের নাম। নয় বছর বয়সী মীনা, যে কিনা তার গ্রামের বিভিন্ন সুপরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক উন্নয়নের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, পরিবারে অসম খাদ্য বণ্টন, শিশুশ্রম রোধ প্রভৃতি বিষয়ে সচেতন করা ও কার্যকর বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ‘মীনা’ চরিত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কর আসছে। মীনা শিশু-কিশোরদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় কার্টুন। এই কার্টুনে আরও দুটি গুরুত্বপুর্ণ চরিত্র রয়েছে। একটি হলো মীনার ভাই রাজু এবং আরেকটি তার পোষা পাখি মিঠু।
লিঙ্গবৈষম্য রোধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শিশু নিরাপত্তার গুরুত্ব নিয়ে মীনা কার্টুনের গল্পগুলো তৈরি করা হয়। বাংলা ভাষা ছাড়াও মীনা কার্টুনটি হিন্দি, উর্দু, নেপালি, ইংরেজিসহ কমপক্ষে ২৯টি ভাষায় তৈরি হয়েছে।
আরবিতেও মীনা কার্টুন ডাবিং করা হয়। প্রথমে মীনার ১৩টি পর্ব বানানো হয় এবং তা প্রচার করা হয় সার্কভুক্ত সাতটি দেশের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। কার্টুনটির অসম্ভব সুন্দর ও জনপ্রিয় গানটি রচনা করেছেন প্রখ্যাত গীতিকার আরশাদ মাহমুদ এবং ফারুক কায়সার। আর গানে পরিচিত মিষ্টি কণ্ঠটি দিয়েছেন সুষমা শ্রেষ্ঠা।
নব্বইয়ের দশকে উপমহাদেশের মেয়েদের অধিকার সুংসহত করার লক্ষ্যে মীনা কার্টুন প্রচারের উদ্যোগ নেয় ইউনিসেফ। এদিকে সে সময় চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ারের আবিষ্কার ‘মনের কথা’ নামের একটি পাপেট শো’ প্রচার করা হতো বিটিভিতে। তাতে ‘পারুল’ নামের এক বিখ্যাত মেয়ে চরিত্র বাংলাদেশে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেখান থেকেই মূলত ‘মীনা’ চরিত্রের ধারণা নেয় ইউনিসেফ। পরে ১৯৯১ সালে বিখ্যাত ভারতীয় কার্টুনিস্ট রাম মোহন ইউনিসেফের সহযোগিতায় মিনা কার্টুনের প্রথম অ্যানিমেশন পরিচালনা করেন।
এরপর একে একে ১৬টি এপিসোড তৈরি করেন তিনি। এই ১৬টি এপিসোডের কার্যকাল ছিল ২০০১ সাল পর্যন্ত। এই পর্বগুলো রাম মোহনকে সাজাতে সাহায্য করে ইউনিসেফ, হান্না-বারবারা কার্টুনস এবং টুনবাংলা।
বাংলাদেশে প্রথম ১৯৯৫ সালে বিটিভিতে মীনা কার্টুন দেখানো শুরু হয়। টেলিভিশনে দেখানোর পাশাপাশি রেডিওতে প্রচারিত হতো মীনার অনুষ্ঠান। ৬৮টি ভ্রাম্যমাণ ফিল্ম ইউনিটের মাধ্যমে মীনা পৌঁছে গেছে দেশের আনাচ-কানাচে।
মীনার পোশাকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের গ্রহণযোগ্যতা আনার জন্য রাম মোহন প্রথমেই নানান পোশাকে মীনার বিভিন্ন স্কেচ আঁকতে শুরু করেন। অবশেষে সবগুলোর মধ্যে মীনার লং-স্কার্টের পোশাকটিই চূড়ান্ত করার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া কার্টুনটিকে একটু মজার ও রসাত্মক করে তোলার জন্য মীনার পছন্দের পোষা প্রাণী হিসেবে একটি বানরকে রাখার পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীকালে তার বদলে দেখা যায় দুষ্ট মিষ্টি কথা বলা মিঠুকে। অন্যান্য চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- মীনার মা, বাবা, দাদি, ও ছোট বোন রানী, রীতা, মুনমুন, দোকানদার, মোড়ল, দিপু, রিতা, শিক্ষিকা, ফুফু আম্মাসহ অনেকে।