হুমায়ূন আহমেদ তার ‘মাতাল হাওয়া’ উপন্যাসের উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন, “কোনো মৃত মানুষ মহান আন্দোলন চালিয়ে নিতে পারেন না। একজন পেরেছিলেন। তিনি আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তার রক্তমাখা শার্ট ছিল ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি।”
১৯৪২ সালের ১০ জুন এই শহীদ আসাদের জন্মবার্ষিকী। ১৯৪২ সালের এই দিনে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন আসাদ। এরপর পড়েন জগন্নাথ কলেজ ও সিলেটের এমসি কলেজে।
১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৬৬ সালে বি. এ এবং ১৯৬৭ সালে এম. এ ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছর আসাদ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং কৃষক সমিতির সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নির্দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা এবং নরসিংদী এলাকায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন।
১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়ার সময়ে আসাদ ছিলেন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত প্রাণ আসাদুজ্জামান গরিব ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার বিষয়ে সদাজাগ্রত ছিলেন। তিনি শিবপুর নৈশ বিদ্যালয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ছিলেন। শিবপুর কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও তিনি স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে আর্থিক তহবিল গড়ে তোলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী আসাদের জীবনে সুযোগ, সম্ভাবনা কম ছিল না। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বলতে যা বেশির ভাগ মানুষ বোঝেন, তিনি সে পথে হাঁটেননি। মওলানা ভাসানীর নির্দেশে কৃষক সমিতিকে সংগঠিত করতে নিজের এলাকায় ফিরে যান। ৬৯ এর আন্দোলনের তুমুল তুঙ্গ মুহূর্তে তিনি ঢাকায় আসেন। পুলিশের গুলিতে এ সম্ভাবনাময়ের প্রাণ যায়। কিন্তু তিনি জীবিত থাকেন অগণন তরুণের স্পন্দনে। এ সময়ের আততায়ীরাও তাকে স্মরণ না করে পারে না। ক্ষমতা ও ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো নানা বাণী ও বন্দনা দিয়ে পালন করে থাকে শহীদ আসাদ দিবস।
শহীদ আসাদকে নিয়ে কবি শামসুর রাহমান রচিত নন্দিত কবিতা ‘আসাদের শার্ট’ কবিতার কিছু পঙতি তুলে দেওয়া যেতে পারে।
“আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।”
আসলে কিছুই ঢাকেনি। সবই উলঙ্গ। ৫০ বছর পার হয়ে গেছে আমাদের প্রাণের পতাকা প্রাপ্তির। আইয়ুব গেটের নাম পাল্টে আসাদ গেট হয়েছে। খুব মসৃণ এ অ্যাভিনিউয়ের কারপেটিং। সেখানে ফুল দেওয়া হয় আসাদ দিবসে।
যাকে নিয়ে কথা শুরু সেই শহীদ আসাদকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন কবি হেলাল হাফিজও।
‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ থেকে উদ্ধৃত করা যায়
“...
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে।”