কালোবাজারি রুখতে ঈদযাত্রার আন্তনগর ট্রেনের সব অগ্রিম টিকিট গত বছর থেকে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ঈদুল আজহার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। দিনে সব মিলিয়ে সাড়ে ৩৩ হাজার অগ্রিম টিকিট বিক্রি হলেও টিকিটপ্রত্যাশী ছিলেন কমপক্ষে ২ লাখ করে। টিকিটের চেয়ে চাহিদা কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় অভিযোগেরও শেষ নেই।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, অনলাইনে টিকিট বিক্রি হওয়ায় স্টেশনে ভিড় ও দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে। আসনের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকলে সবাই টিকিট পাবেন না, এটাই স্বাভাবিক।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, এবার ঈদুল আজহায় ঢাকা ছাড়বে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ট্রেনে ঢাকা ছাড়তে পারবে বড়জোর ৮ লাখ মানুষ।
রেলওয়ে বলছে, ঈদের আগে পাঁচ দিন প্রতিদিন রাজধানী থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে ৪৩টি আন্তনগর ট্রেন। দিনে সব মিলিয়ে এগুলোতে আসনসংখ্যা সাড়ে ৩৩ হাজার। লোকাল, মেইল, কমিউটারসহ সব মিলিয়ে ট্রেন চলবে ৬৯টি। এ ছাড়া ১০ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে। আন্তনগর ছাড়া বাকি ট্রেনগুলোর টিকিট যাত্রার আগে বিক্রি হয়। যাত্রার দিন আন্তনগর ট্রেনের নন-এসি ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট স্টেশনের কাউন্টারে বিক্রি হয়।
এবারের ঈদযাত্রার আন্তনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২ জুন শুরু হয়ে গতকাল শেষ হয়। পর্যায়ক্রমে ১২ থেকে ১৬ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে।
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান সহজ ও রেলওয়ে সূত্র বলছে, প্রথম দিনে পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরুর আধা ঘণ্টায় সহজের সার্ভারে ৬০ লাখ হিট হয়। পূর্বাঞ্চলে ছিল ২৮ লাখ হিট। ৩ জুন পশ্চিমাঞ্চলের টিকিটের জন্য প্রথম আধা ঘণ্টায় হিট হয় ১ কোটি ৯০ লাখ। পূর্বাঞ্চলের টিকিটের জন্য হিট হয় ১ কোটি ১ লাখ। ৪ জুন পশ্চিমাঞ্চলের টিকিটের জন্য প্রথম আধা ঘণ্টায় প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ হিট এবং গত বুধবার ১ কোটি ৭০ লাখ হিট হয়।
পূর্বাঞ্চলের টিকিটের জন্য প্রথম আধা ঘণ্টায় হিট হয় ৯৮ লাখ।
গতকাল শেষ দিনে প্রথম আধা ঘণ্টায় পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের টিকিটের জন্য হিটের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৪ লাখ ও ৫৭ লাখ। ১৬ জুনের যাত্রার ৩০ হাজার ৩৯৯টি টিকিট ছাড়া হলেও বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিক্রি হয় ২৪ হাজার ৫৪৩টি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহজের এক কর্মকর্তা বলেন, হিট বলতে যাত্রীসংখ্যা নয়। একজন টিকিটপ্রত্যাশী একটি টিকিটের জন্য যে চেষ্টা করেন, সেটাকেই সহজের সার্ভারে হিট কাউন্ট ধরা হয়। একজন ব্যক্তি মোবাইল বা ল্যাপটপে কয়েকটি ব্রাউজার খোলা রেখে টিকিটের জন্য চেষ্টা করেন। তার প্রতিটি চেষ্টাই একেকটি হিট গণ্য হয়। তিনি বলেন, অনলাইনে প্রতি মিনিটে এক থেকে দেড় লাখ লোক টিকিট কাটার চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের করা এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গত ঈদুল ফিতরে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছিল। এবার কোরবানির ঈদে ঢাকা ছাড়বে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঈদুল ফিতরের আগের কয়েক দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস-মিনিবাসে, ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ ট্রেনে এবং সোয়া লাখ মানুষ লঞ্চে ঢাকা ছেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে প্রতিদিন গেছে সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। মোটরসাইকেলে গেছে ৪ লাখ মানুষ। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি নিয়ে তিনি বলেন, টিকিটের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা বেশি। তাই কেউ পাবে, কেউ পাবে না। তবে সমস্যা হচ্ছে টিকিটপ্রত্যাশীরা জানতে পারছেন না, কখন টিকিট শেষ হচ্ছে। এতে ভোগান্তি ও অভিযোগের সুযোগ তৈরি হয়।
২ লাখ সদস্যের ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে হেল্পলাইন’ নামের ফেসবুক গ্রুপে ট্রেনযাত্রীরা নানা ভোগান্তি তুলে ধরেন। সেখানে টিকিট না পাওয়া, বারবার চেষ্টায়ও লগইন করতে না পারা, টিকিট সিলেক্ট করার পরও সেটি না কাটতে পারাসহ অসংখ্য অভিযোগ আছে সেখানে।
সহজ ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ দেবনাথ বলেন, সমস্যামুক্ত রাখতে তাঁরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। সাড়ে ৩৩ হাজার টিকিটের জন্য লাখের ওপর মানুষ তাঁদের সার্ভারে প্রবেশ করে। ফলে কেউ টিকিট পাবে, কেউ পাবে না। এর বাইরে তাঁদের সার্ভারে কোনো সমস্যা নেই।