কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। নিজেদের কর্মে সবার প্রাণে, শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় তারা বেঁচে থাকেন চিরকাল। সাধারণ কারও মৃত্যু হলে পরিবার ছাড়া অন্য কেউ তাদের স্মরণ করে না। অথচ ‘কীর্তিমানের’ মৃত্যু হলে তার শরীরের অবসান হয় বটে, কিন্তু তার মহৎ কাজ তাকে বাঁচিয়ে রাখে অনন্তকাল। এ বছর দেশবরেণ্য এমনি কয়েকজনকে আমরা হারিয়েছি। তারা রাজনৈতিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টজন। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। হারানোদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়েই বছরান্তের আজকের এই প্রতিবেদন।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ও দৈনিক দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী গত ১৬ জানুয়ারি রাত ১১টার কিছু সময় পর রাজধানীর কল্যাণপুরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
ড. রেজোয়ান হোসেন সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাঈল জেলার এলাসিন গ্রামে। বাবা মরহুম আতিকুল হোসেন সিদ্দিকী। মা মরহুমা হাওয়া সিদ্দিকী। এসএসসি পাস করেন ১৯৬৮ সালে। বলতে গেলে তার পর থেকেই জীবন সংগ্রাম শুরু। ১৯৬৯ সালে করটিয়ার সাদত কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তার পড়াশোনা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। হুলিয়া নিয়ে তিনি চলে যান চট্টগ্রামে তার চাচা মোফাখখর হোসেন সিদ্দিকীর আশ্রয়ে। এরপর রেজোয়ান সিদ্দিকী চলে আসেন ঢাকায়।
সাংবাদিক ওমর ফারুক শামীম
অনলাইন পোর্টাল সংবাদ প্রকাশের সাবেক বার্তা সম্পাদক সাংবাদিক ওমর ফারুক শামীম গত ১৯ জানুয়ারি রাত ৯টায় রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫১ বছর।
ওমর ফারুক শামীম দৈনিক জনকণ্ঠের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এ ছাড়া তিনি প্রতিদিনের সংবাদ, বাংলাদেশের খবর, জাগরণ, দিন পরিবর্তন, ভোরের আকাশ, বাংলাদেশ বুলেটিনসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি সংবাদ প্রকাশের বার্তা সম্পাদক ছিলেন।
অভিনেতা আহমেদ রুবেল
অভিনেতা আহমেদ রুবেল গত ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মারা যান। ওইদিন সন্ধ্যায় নুরুল আলম আতিকের নতুন সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’–একটি বিশেষ প্রদর্শনী ছিল। এ প্রদর্শনীতেই যোগ দিতে আসছিলেন তিনি। পথেই অসুস্থ হয়ে পড়লে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এরপর সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিনেতা আহমেদ রুবেল ১৯৬৮ সালের ৩ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেলিম আল দীনের ‘ঢাকা থিয়েটার’ থেকে তার অভিনয়ের হাতেখড়ি। আহমেদ রুবেল অভিনীত প্রথম নাটক গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নযাত্রা’। এরপর তিনি হুমায়ূন আহমেদের ‘পোকা’ নামের ঈদের নাটকে অভিনয় করেন। এ ছাড়া তিনি হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন।
আহমেদ রুবেল মঞ্চ ও ছোটপর্দার অভিনেতা হলেও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও তিনি সুনাম অর্জন করেন। ১৯৯৩ সালে ‘আখেরী হামলা’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দ্য লাস্ট ঠাকুর’, ‘ব্যাচেলর’, ‘গেরিলা।
সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ
সংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন সাদি মহম্মদ। তবে সেখানে পড়াশুনা চালিয়ে যাননি। পরে তিনি বৃত্তি পেয়ে ১৯৭৫ সালে সংগীত বিষয়ে শান্তিনিকেতনে পড়ার সুযোগ পান। এরপর বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সেখানে শান্তিদেব ঘোষ ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গান শেখেন।
২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সাদি মহম্মদ। ২০০৯ সালে তার শ্রাবণ আকাশে ও ২০১২ সালে তার সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পিনু খান
আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা পিনু খান গত ১৬ মার্চ রাত ১টায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
পিনু খান ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সামছুল আলম বাবুর সহধর্মিণী এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. বাহাউদ্দিন আহমেদের পুত্রবধূ।
অভিনেতা ওয়ালিউল হক রুমি
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অভিনেতা অলিউল হক রুমি গত ২২ এপ্রিল ভোরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।
অলিউল হক রুমি বরিশালের আঞ্চলিক ভাষাতেই বেশি অভিনয় করেছেন। ১৯৮৮ সালে ‘এখন ক্রীতদাস’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ের যাত্রা শুরু করেন। টেলিভিশনের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে ‘দরিয়া পাড়ের দৌলতী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হয় তার।
রুমি অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘ঢাকা টু বরিশাল’, ‘আমেরিকান সাহেব’, ‘জার্নি বাই বাস’, ‘বাকির নাম ফাঁকি’, ‘যমজ সিরিজ’, ‘কমেডি ৪২০’, ‘চৈতা পাগল’, ‘জীবনের অলিগলি’, ‘মেঘে ঢাকা শহর’ ইত্যাদি।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী গত ২ মে সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ জে মোহাম্মদ আলী ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্বাদশ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবা এম এইচ খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল। ১৯৮০ সালে তিনি হাইকোর্টে এবং ১৯৮৫ সালে আপিল বিভাগে অনুশীলনের জন্য তালিকাভুক্ত হন। ২৩ অক্টোবর ২০০১ সালে তিনি অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন।
ছাত্রনেতা শফি আহমেদ
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা শফি আহমেদ গত ৩ জুন সন্ধ্যায় মারা যান। শফি আহমেদ জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় উপসম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে নেত্রকোনা-৪ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।
হাকিমপুরী জর্দার মালিক মো. কাউছ মিয়া
দেশের শীর্ষ করদাতা ও হাকিমপুরী জর্দার মালিক মো. কাউছ মিয়া (৯৪) গত ২৪ জুন রাত ১২টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান।
মো. কাউছ মিয়ার জন্ম চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বরে। তিনি দীর্ঘদিন চাঁদপুর জেলা শহরের পুরান বাজারে ব্যবসা করেছেন। পরে হাজীগঞ্জে, সেখান থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় ব্যবসা করেন।
গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান
জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা চলাকালীন অসুস্থ হয়ে গত ৫ জুলাই জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ১২তম রাউণ্ড তিনি মারা যান।
গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান দাবা খেলায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে ছেলে তাহসিন তাজওয়ার জিয়ার সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ২০২২ সালে তারাই প্রথম পিতা-পুত্র জুটি, যারা জাতীয় দাবা দলে ছিলেন।
কবি মাকিদ হায়দার
সত্তর দশকের অন্যতম কবি মাকিদ হায়দার গত ১০ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টায় উত্তরার নিজ বাসায় মারা যান।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পাবনার দোহারপাড়ায় মাকিদ হায়দারের জন্ম। তার পিতা মোহাম্মদ হাকিম উদ্দিন শেখ ও মাতা রহিমা খাতুন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক মাকিদ হায়দার গণসংযোগ ও গণমাধ্যম বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) মহাব্যবস্থাপক ছিলেন।
পাঁচ দশক ধরে সাহিত্যে একটানা ভূমিকা রেখে গেছেন মাকিদ হায়দার। নিজস্ব একটা ভাষায় কবিতা লেখেছেন, সেই ভাষা ছিল আধুনিক ও পরিমিত।
মাকিদ হায়দারের উল্লেখযোগ্য লেখার মধ্যে রয়েছে, ‘রোদে ভিজে বাড়ি ফেরা’ ‘আপন আঁধারে একদিন’ ‘রবীন্দ্রনাথ: নদীগুলা’ ‘বাংলাদেশের প্রেমের কবিতা’ ‘যে আমাকে দুঃখ দিলো সে যেনো আজ সুখে থাকে’ ‘কফিনের লোকটা’ ‘ও প্রার্থ ও প্রতিম’ ‘প্রিয় রোকানালী’ ‘মমুর সাথে সারা দুপুর’।
অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক
একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক গত ২৪ জুলাই রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
একাধারে ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. মাহবুব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ছিলেন। প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। গবেষণায় অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
১৯৩১ সালের ৩১ জুলাই খুলনার দৌলতপুর গ্রামে শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক, ১৯৪৮ সালে তৎকালীন ব্রজলাল একাডেমি থেকে ৩টি লেটারসহ আইএসসি, ১৯৫০ সালে বিএসসি পাস করেন তিনি।
১৯৫০ সালে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে পুরকৌশল বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে পাস করেন ও গোল্ড মেডেল পান। পরবর্তীতে দেশের খ্যাতিমান প্রকৌশলী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
প্রফেসর ড. গোলাম
একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক, গবেষক, আভিধানিক, প্রফেসর ড. গোলাম মুরশিদ গত ২২ আগস্ট মারা যান।
১৯৪০ সালের ৮ এপ্রিল বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা গ্রামে জন্ম গোলাম মুরশিদের। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় দুই দশক তিনি অধ্যাপনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
গোলাম মুরশিদ ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন লন্ডনের বিবিসি বাংলা বিভাগে। এ ছাড়া ১৯৯১ সাল থেকে লন্ডনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তার জীবন ও জগৎ প্রসারিত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ।
সৃজনশীল ও গবেষণামূলক কাজের জন্য গোলাম মুরশিদ ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০২১ সালে ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক লাভ করেন। এ ছাড়াও অসংখ্য পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন।
সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
চাঁদপুর সদর উপজেলার গোবিন্দিয়ায় রুহুল আমিন গাজীর জন্ম হয়। তার বাবার নাম কফিল উদ্দিন এবং মা আয়েশা খাতুন। তিনি সাংবাদিকদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) চতুর্থবারের মতো সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
রুহুল আমিন বিএফইউজের মহাসচিব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আমৃত্যু দৈনিক সংগ্রাম-এর চিফ রিপোর্টার ছিলেন
সাংবাদিক অঘোর মন্ডল
জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডল গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
অঘোর মন্ডল পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও সব জায়গাতেই তার সমান বিচরণ। তিনি সংবাদ প্রকাশে নিয়মিত খেলাবিষয়ক কলাম লিখতেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেছেন কাজের সুবাদে। কলাম লিখছেন নিয়মিত। ‘এক্সট্রা টাইম’ ও ‘ইনজুরি টাইম’ তার উল্লেখযোগ্য বই।
ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুর
ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুর গত ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের জন্ম ১৯২৯ সালে রাজবাড়ীর দাদুপুর গ্রামে। ১৯৫২ সালে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ২০০৫ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
আব্দুল গফুরের বাবার নাম হাজী হাবিল উদ্দিন মুন্সী ও মায়ের নাম শুকুরুন্নেসা খাতুন। ১৯৪৫ সালে স্থানীয় মইজুদ্দিন হাই মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৪৭ সালে কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন।
ভাষা আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি অংশ নেওয়ার ফলে লেখাপড়ায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও ১৯৬২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশাজীবনে আব্দুল গফুর ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দারুল উলুমের (ইসলামিক একাডেমি) সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। পরে এক বছর চট্টগ্রামে জেলা যুবকল্যাণ অফিসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আবুজর গিফারী কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা পরিচালক ছিলেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বরুদ্দোজ্জা চৌধুরী
সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বরুদ্দোজ্জা চৌধুরী গত ৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩টায় রাজধানীর উত্তরা বাংলাদেশ মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ছেড়ে দেন। তিনি ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সব পরীক্ষাতেই তিনি মেধা তালিকায় ছিলেন।
এ ছাড়া তিনি যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো-এফআরসিপি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফসিপিএস। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বহু গ্রন্থের প্রণেতা।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
মতিয়া চৌধুরী
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সিনিয়র সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী গত ১৬ অক্টোবর দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে মতিয়া চৌধুরীর জন্ম। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
মতিয়া চৌধুরী ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রূষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন।
১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ১নং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মতিয়া চৌধুরী।
কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম গত ১৭ অক্টোবর রাত ২টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন এই খ্যাতিমান সুরকার। গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন সুজেয় শ্যাম। অজিত রায় ছিলেন গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী।
সুজেয় শ্যামের সুর করা গানগুলোর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয়রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’ উল্লেখযোগ্য।
অভিনেতা মাসুদ আলী খান
বরেণ্য অভিনেতা মাসুদ আলী খান (৯৫) গত ৩১ অক্টোবর বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে রাজধানীর গ্রিন রোডের নিজ বাসায় মারা যান।
মঞ্চে অভিনয় দিয়ে শুরু মাসুদ আলী খানের। ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর ছোট পর্দায় অভিষেক। চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও নজর কেড়েছেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় ৫০০ নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করে হয়ে উঠেছেন বাংলা নাটকের চেনা মুখ।
মাসুদ আলী খানের জন্ম ১৯২৯ সালে ৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জের পারিল নওধা গ্রামে। বাবা আরশাদ আলী খান ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। মা সিতারা খাতুন। মাসুদ আলী খান ১৯৫২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। দুই বছর পর জগন্নাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার পরপর নূরুল মোমেনের নাটক ‘ভাই ভাই সবাই’ দিয়ে ছোট পর্দায় মাসুদ আলী খানের অভিষেক হয়। আর সাদেক খানের ‘নদী ও নারী’ দিয়ে বড় পর্দায় তার পথচলা শুরু।
মাসুদ আলী খান ১৯৫৫ সালে বিয়ে করেন তাহমিনা খানকে। ব্যক্তিজীবনে এই অভিনেতার এক ছেলে ও এক মেয়ে। চাকরিজীবনে সরকারের নানা দপ্তরে কাজ করেছেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সচিব হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে একের পর এক বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
মাসুদ আলী খানের অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে, ‘দুই দুয়ারি’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘মাটির ময়না’। তার অভিনীত আলোচিত কয়েকটি নাটক হচ্ছে ‘কূল নাই কিনার নাই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’ প্রভৃতি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম
সাবেক প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম (৮১) গত ১৬ নভেম্বর ভোর পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।
ফজলুল করিম ১৯৪৩ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আহমেদ কবীর। তিনি আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদের বংশধর।
ফজলুল করিম ১৯৫৮ সালে পটিয়ার কাজেম আলী হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৬৯ লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে বার অ্যাট ল’ হন। ১৯৬৫ সালে তিনি আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম বারে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ১৯৭০ সালে হাইকোর্টে এবং ১৯৭৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
বিচারপতি করিম ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর তিনি হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। দুই বছর পর স্থায়ী হন তিনি। ২০০১ সালের ১৫ মে তিনি আপিল বিভাগে যোগ দেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ (৮৫) গত ২৬ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। শিক্ষা প্রশাসক, কবি, সম্পাদক এবং অনুবাদক হিসেবে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সুফি সাহিত্যে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশে। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অবস্থায় ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধান বের করেন। চার বছর পর তিনি আবার অধ্যাপক হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। ১৯৯৮ সালে তিনি ঐচ্ছিক অবসরে যান।
মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের আসামের তিন শুকিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার পরিবার চট্টগ্রামে চলে আসে।
সংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার
একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার (৭২) গত ১২ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।
পাপিয়া সারোয়ার ১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীতে পড়াশোনা করেছেন। তার আগে তিনি ১৯৬৬ সালে ছায়ানটে ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন এবং জাহেদুর রহিমের কাছে এবং পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে সংগীত দীক্ষা নেন।
১৯৯৬ সালে ‘গীতসুধা’ নামে একটি গানের দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পাপিয়া সারোয়ার। তার অসংখ্য অ্যালবাম রয়েছে। আধুনিক গানেও আছে তার সাফল্য। ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন, নাইরে টেলিগ্রাম’ গানটি তাকে আপামর বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা দিয়েছে।
এ এফ হাসান আরিফ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিমান ও পর্যটন এবং ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ গত ২০ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি, এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন হাসান আরিফ। তিনি একজন বাংলাদেশি আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল।
২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন হাসান আরিফ। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।