সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ চলমান। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও মোড়গুলো অবরুদ্ধ হয়ে আছে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারী ও যানবহনের যাত্রীরা।
তবে রাজধানী অবরুদ্ধ হওয়ার কারণে সবাই যখন তীব্র গরম আর রোদে নাজেহাল অবস্থায় চরম বিরক্তি প্রকাশ করছেন তখন কারো কারো মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে ফেরিওয়ালা বা শিশু পানি বিক্রিতাদের যেন পোয়াবারো। ব্লকেডের কারণে তাদের বেচাবিক্রি তুঙ্গে উঠেছে।
শিশু পানি বিক্রেতাদের কথা, এভাবে রেগুলার ব্লকেড থাকলে তাদের বেচাবিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তাই তারা চায়, এভাবে অবরোধ চলুক, রেগুলার রাস্তা থাকুক। বাংলামোটরে ঘুরে ঘুরে বোতলের পানি বিক্রি করা রাসেল, সুজন, কামরুল জানালো, তাদের বেচাবিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এমনিতে রাস্তা বন্ধ, তার ওপর অনেক গরম। সেজন্য পানির চাহিদা বেড়েছে।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরের দিকে তীব্র গরমের মধ্যেও শাহবাগে পানি বিক্রি করছিল কায়সার, কামরুল আর মিন্টু। তারা জানাল, আগে সারা দিনেও ৫০০ টাকার পানি বিক্রি করা যেতে না। আর এখন দুপুরের মধ্যে তিন হাজার টাকার বেশি পানি বিক্রি হয়েছে।
আরও কয়েকজন শিশু জানাল, তীব্র গরম আর রোদের কারণে মানুষের তৃষ্ণা লাগছে। তাই তারা ২০ টাকার পানি ৩০-৪০ টাকা দিয়েও কিনে নিচ্ছে। পিন্টু নামের এক শিশু বলল, যতক্ষণ ব্লকেড থাকে ততক্ষণই ভালো। বেচা-বিক্রি ভালো হয়। রেগুলারই ‘ব্লকেড দেয়া’ উচিত।
এদিকে, আন্দোলনে বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ায় দারুণ খুশি শিশু পানি বিক্রেতারা। তারা তাই আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গিয়ে তারা সড়ক ব্লকেডে শামিল হয়েছে। তাদের কেউ কেউ বাইক আটকাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রাইভেট গাড়ি ও সিএনজি অটোরিকশাও তারা আটকে দিচ্ছে।
তবে আন্দোলন চলার মধ্যেই কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি হয়। এতে সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। চার সপ্তাহ পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে।
আপিল বিভাগের রায়ের পরও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরে যায়নি সড়ক থেকে। তারা আদালতের প্রতি সম্মান রেখে বলছেন, কমিশন গঠন করে কোটা পদ্ধতির সংস্কার ও স্থায়ী সমাধান হওয়ার আগে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।