প্রবাসীদের ফ্রি টিকিটের প্রলোভন দেখিয়ে ‘শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আনা’ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেে র্যাব।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় অপহৃত এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিপুল স্বর্ণালংকার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন খোরশেদ আলম (৫২), জুয়েল রানা মজুমদার (৪০) ও মাসুম আহমেদ (৩৫)।
র্যাব জানায়, প্রবাসী ব্যক্তি যারা বাংলাদেশে আসতে চাইতেন, প্রতারক চক্রটি তাদের টার্গেট করত। পরে ফেসবুকের বিভিন্ন প্রবাসী গ্রুপে ফ্রি বিমান টিকিটে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হতো। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনদের জিম্মি করে অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসত।
র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৯ অক্টোবর রাতে যশোরের চৌগাছা হতে সৈয়দ আলী মন্ডল (৬৫) নামের এক ব্যক্তি মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে প্রবাস-ফেরত তার ছেলেকে নেওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের পরিবার সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে নিখোঁজের জামাতা রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এছাড়া নিখোঁজের পরিবার র্যাব-৪-এর কাছে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের জন্য আবেদন করেন। র্যাব নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য গোয়েন্দা নজদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ ও র্যাব-৪ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করে নিখোঁজ ও অপহৃত সৈয়দ আলী মন্ডলকে উদ্ধার করে।
কমান্ডার মঈন বলেন, ভুক্তভোগী সৈয়দ আলীর ছেলে প্রবাসী নুরুন্নবী গত ২০ আগস্ট মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যান। বিদেশে যাওয়ার পর সেখানে ভালো চাকরি ও সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় একপর্যায়ে দেশে ফেরত আসার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় প্রবাসে এই চক্রের মূলহোতা আবু ইউসুফ ও তার সহযোগীরা নুরুন্নবীর আর্থিক দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাকে বাংলাদেশে আসার ফ্রি টিকিট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্বর্ণালংকার এবং একটি লাগেজে বেশ কিছু দামি কসমেটিকস পণ্য, ইলেকট্রনিকস আইটেম, চকলেটসহ বাংলাদেশে নিয়ে এসে চক্রের হোতা খোরশেদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে বলে শর্ত দেন।
প্রবাসী নুরুন্নবী তাদের দেওয়া শর্তে রাজি হন এবং ৯ অক্টোবর রাতে ঢাকায় আসবেন বলে তার পরিবারকে জানান। প্রবাসী নুরুন্নবীর বাবা সৈয়দ আলী ৯ অক্টোবর রাতে প্রবাসফেরত ছেলেকে নেওয়ার জন্য ঢাকায় এলে চক্রের সদস্যরা তাদের পাঠানো পণ্য নিরাপদে পাওয়ার জন্য জামানত হিসেবে প্রবাসী ছেলের বাবা সৈয়দ আলীকে কৌশলে রাজধানীর শান্তিনগরের একটি বাসায় নিয়ে জিম্মি করে রাখেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, চক্রটি বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী আরও বেশকয়েকজন দুস্কৃতিকারী বাংলাদেশিদের পরস্পর যোগসাজসে প্রবাস ফেরত যাত্রীদের মাধ্যমে গত ৫-৬ বছর ধরে অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মূল্যবান পণ্য দেশে এনে বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করে আসছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রবাসীদের গ্রুপসহ বিভিন্ন স্থানে ফ্রি টিকিটে বাংলাদেশে আসার প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করত। বিজ্ঞাপন দেখে যে সব প্রবাসী ফ্রি টিকিটে দেশে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাদেরকে চক্রের মূলহোতা আবু ইউসুফ ফ্রি টিকিট দেওয়ার বিনিময়ে প্রত্যেক প্রবাসীদের কাছে স্বর্ণ, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন প্রকারের দামি প্রসাধনী ও অন্যান্য মূল্যবান পণ্যের ২৫ থেকে ৩০ কেজির ওজনের একটি লাগেজ প্রদান করেন। প্রতিটি লাগেজে আনুমানিক ১০-১৫ লাখ টাকা মূল্যের পণ্য থাকে বলেও জানা যায়।
এছাড়াও যারা ফ্রি টিকিটে দেশে আসতে চায় প্রথমে তাদের পাসপোর্ট এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক নথিপত্র চক্রটি নিজেদের জিম্মায় নেয় এবং প্রকৃতপক্ষে তারা দেশে আসবেন কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে বাংলাদেশে থাকা চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে টার্গেটকৃত প্রবাসীর আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রবাসী ব্যক্তির দেশে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, প্রবাসী ব্যক্তি দেশে আসার আগের দিন চক্রের সদস্যরা কৌশলে প্রবাসী ব্যক্তিকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয় এবং একটি লাগেজে করে স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন প্রকার দামি ইলেকট্রনিক্স আইটেম এবং প্রসাধনী সামগ্রী প্রদান করে যেগুলো বাংলাদেশে থাকা চক্রের অপর সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করতে হয়। একইসঙ্গে যাদেরকে ফ্রি টিকিট দেওয়া হয় তাদের আত্মীয় স্বজনকে বাংলাদেশের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। প্রবাসীর আত্মীয়-স্বজন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কৌশলে চক্রটি তাদেরকেও ঢাকায় এনে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে তাদের পরিচিত ও আগে থেকে নির্ধারিত বাসায় নিয়ে জিম্মি করে রাখে। পরে প্রবাসী ওই ব্যক্তি মালামাল হস্তান্তর করলে জিম্মি করে রাখা আত্মীয়দের ছেড়ে দেওয়া হয়।