আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল ক্যাম্প উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, “আমাদের জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত দুদিন আগেও আমরা একটি সংগঠনের মূল ব্যক্তিসহ অপারেশনাল কমান্ডারকে গ্রেপ্তার করেছি। যারা নতুন করে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। এই মুহূর্তে জঙ্গি হামলার কোনো ঝুঁকি নাই, জঙ্গিদের সেই সক্ষমতাও নাই।”
তিনি বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কাজ করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা যেসব সংসদীয় আসন রয়েছে, কোথাও কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন৷ উৎসবমুখর পরিবেশে বিরাজ করছে। আমরা আশাবাদী কিছু ঘটবে না এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সেরকম প্রস্তুতিও রয়েছে। যেকোনো ধরনের অরাজকতা, নাশকতা ঠেকাতে ও প্রতিরোধে সক্ষমতা রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, “ভোট দেওয়া জনগণের সাংবিধানের অধিকার। সেই অধিকার প্রয়োগে যাতে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে না পারে, জনগণ যাতে নিরাপদে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে সেজন্য ডিএমপির সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।”
নির্বাচন কেন্দ্র করে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার শঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জঙ্গিদের মাথা ছাড়া বা তাদের তৎপরতা কিংবা কোনো ঝুঁকি আমরা দেখছি না। এই মুহূর্তে জঙ্গি হামলার কোনো ঝুঁকি নেই। আমরা প্রস্তুত আছি, কাজ করছি যাতে করে কোনো ধরনের অপরাধপ্রবণতা পরিলক্ষিত হলেই আমরা আমরা পূর্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।”
নির্বাচনের ঠিক পরে কিংবা আগে রাজনৈতিক সহিংসতা হওয়ার একটা শঙ্কা জনমনে কাজ করছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, “এই ধরনের নাশকতা বা অরাজকতা যারা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এগুলো প্রতিহত করার জন্য সক্ষমতা ও প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এবং ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা আমার গ্রহণ করছি। ইতোপূর্বে যারা নাশকতা সঙ্গে জড়িত সেই মাস্টারমাইন্ডসহ এর পিছনে যারা জড়িত ছিল সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, আনা হচ্ছে।”
নির্বাচনের আগে এবার ট্রেনে নাশকতার ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়গুলোকে আপনারা আলাদাভাবে দেখছেন কি-না জানতে চাইলে ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, “রেলে নাশকতা নিয়েও আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন স্থানে রেলে নাশকতা ঘটনা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। রেলে বড় দুটি নাশকতার ঘটনার একটি ইতিমধ্যে আমরা মাস্টারমাইন্ডসহ যারা রেল লাইন কেটেছিল তাদেরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তেজগাঁয়ে রেলে আগুনে নারী ও শিশুসহ চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা কাজ করছি। আশা করছি এটাও আমরা উদঘাটন করতে পারব। রেলে যাতে আর কোনো নাশকতার ঘটনা না ঘটে সেজন্য পুলিশ কাজ করছে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কাজ করছে। রেলকে নিরাপদ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন স্থানে রেল এক্সিডেন্টের নেপথ্যে কোনো ধরণের নাশকতার উদ্দেশ্য আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এটা যদি নাশকতা হয় অবশ্যই যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।”
তিনি বলেন, “কোনো নাশকতাকারীকে আমরা ছাড় দেব না, নাশকতা করে কেউ ছাড় পাবে না। বাংলাদেশ পুলিশের অনেক সক্ষমতা হয়েছে। আগামী দিনেও যেকোনো ধরনের নাশকতাকে আমরা নস্যাব করে দিতে পারব।”