বাঙালির বিয়ে মানেই কনের জন্য কিনতে হবে লাল বেনারসি শাড়ি। আর সেই শাড়ি যদি হয় মিরপুরের বেনারসি পল্লীর, তবে তো কথাই নেই। একটা সময় ছিল যখন এই পল্লীর দোকানগুলোতে ছিল রমরমা ব্যবসা। মৌসুম এলেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখরিত থাকতো দোকানগুলো। কিন্তু বর্তমান চিত্র একটু আলাদা।
দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার এই পল্লীতে কমেছে বেনারসি শাড়ি বিক্রি। মৌসুম চললেও নেই আশানুরূপ বিক্রি। এতে হতাশায় দিনাতিপাত করছেন অনেক ব্যবসায়ীরা।
মিরপুরের বেনারসি পল্লীতে দীর্ঘদিন ধরে শাড়ির ব্যবসা করেন সাইফুল ইসলাম জসিম। রয়েছে বেনারসি রূপ সারিনঘর নামের একটি দোকানও। কথা হলে তিনি বলেন, “দেশে অর্থনৈতিক মন্দাভাব চলছে। শাড়ির ব্যবসায় যে হিসাবে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, সে হিসাবে বিক্রি নেই। ব্যবসার আগের চিত্রের চেয়ে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।”
সরেজমিনে পল্লীর দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেকটা অলস সময় পার করছেন দোকানের কর্মচারীরা। দুই একজন ক্রেতা এলেই হুমড়ি খেয়ে নিজের দোকানে ক্রেতাকে টানতে দোকানের বাইরে বসে থাকা প্রতিনিধিরা হাঁক-ডাক দিচ্ছেন। আর ক্রেতা পেলেই বিভিন্ন ধরনের শাড়ির বিস্তর বর্ণনা দিয়ে মেলে ধরছেন ক্রেতাদের সামনে। এসময় দোকানগুলো ঘুরে অন্যান্য শাড়ির ক্রেতা পাওয়া গেলেও বেনারসি শাড়ির ক্রেতা পাওয়া গেছে মাত্র একজনকে।
এদিকে বেনারসি দোকান মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, বেনারসি শাড়ির মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর মাস থেকে এবং চলে মার্চ পর্যন্ত। মিরপুর বেনারসি পল্লীতে বিক্রি হওয়া শাড়িগুলো মিরপুরের ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ছাড়াও নরসিংদী, আড়াই হাজার, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ঈশ্বরদী, সৈয়দপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়। দোকানগুলোতে বর্তমানে ৮০০ থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকার পর্যন্ত শাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি দোকানে বর্তমানে গড়ে প্রায় ৮ থেকে ১০টি শাড়ি বিক্রি হয়। আর এসব শাড়ির মূল্য ২ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যেই বেশি।
মালিক সমিতির সংশ্লিষ্টদের দাবি, কয়েক বছর আগেও মৌসুমে প্রতিটি দোকানে দৈনিক ১৫ থেকে ২০টির বেশি শাড়ি বিক্রি হতো।
বেনারসি শাড়ি কিনতে আসা আলামিন বলেন, “বেনারসি শাড়ি বিয়ে ছাড়া কেনা হয় না। তাই বেশি দাম হলেও কিনতে হয়। এখানে যারা আসে তারা নির্ধারিত একটি বাজেট নিয়ে আসে। এরমধ্যে গুণগত মান দেখে কিনতে হয়। তবে আমি যে শাড়িটা কিনেছি মান মোটামুটি ভালো। আর বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এখানেও কিছুটা বেড়েছে।”
সাদেক নামের এক শাড়ি বিক্রেতার বলেন, “শ্রমিকের মজুরি, সুতা সবকিছুর সঙ্গে বাড়তি খরচ যুক্ত হয়েছে। তাই বেনারসির শাড়ির দামও বেড়েছে। আগে যেটা বিক্রি হতো ৫ হাজার টাকা, এখন তার দাম হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার। ব্যবসায় আগের মতো হয় না। দর কষাকষি তো থাকেই। কম-বেশি করে বিক্রি করতে হয়। এতে লাভ কম হয়।”
বেনারসি দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাশেম বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিক্রি তেমন হয়নি বললেই চলে। জানুয়ারি মাস থেকে টুকটাক শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু যতটুকু আশা করছি, তা হচ্ছে না। তবে আমরা আশা করছি, আগামী দুই মাস রয়েছে মৌসুম। এই দুইমাসে আমাদের ব্যবসা ভালো হবে।”