রাজধানীসহ সারা দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালগুলোর মধ্যে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। নির্ধারিত ডেঙ্গু ওয়ার্ডগুলোতে রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা পূর্ণ হয়ে এখন অনেকে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পুরুষ ও শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীর ছাপে শয্যা ছাড়িয়ে মেজেতেও কোনো খালি জায়গা নেই।
বুধবার (২ আগস্ট) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
৫০০ শয্যার হলেও বর্তমানে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন চার শতাধিক রোগী। তাদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও শিশুদের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। আসন সংখ্যার চেয়েও অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতেও হিমশিম খেতে দেখা যায় চিকিৎসক ও নার্সদের।
জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে গাইবান্ধা থেকে এসেছেন মোহাম্মদ আলী (৪০)। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারেন তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “হাসপাতালে ভর্তির সময় জানানো হয় বেড খালি নেই। মেঝেতে বেড বিছিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। এমন শর্তে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।”
মোহাম্মদ আলীর মতো যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত বা ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। তাদের সবাইকে আগে জানানো হয়, কোন বেড খালি নাই, মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হবে। এমন শর্তে আগত রোগীদের ভর্তি করানো হচ্ছে।
মানিকনগরের মাণ্ডা এলাকা থেকে শিশু মুবাশ্বির হাসান রাইফাকে নিয়ে হাসপাতালে থাকছেন মা রাহেলা। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “দুই দিন আগে রাত ২টায় এখানে ভর্তি করানো হয়। হঠাৎ করে প্লাটিলেট কমে যাচ্ছিল। ৬ দিন ধরে জ্বর। এখানে আসার পর স্যালাইন ও রক্তের প্লাটিলেট দেওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে সুস্থ হচ্ছে।”
রাইফার মায়ের অভিযোগ, মাণ্ডা এলাকায় সিটি করপোরেশনের নিয়মিত মশার ওষুধ দেওয়া হয় না। সপ্তাহে দু-একদিন এখানে ওষুধ ছিটানো হয়। এই এলাকার সব বাসা-বাড়িতে কেউ না কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
যাত্রাবাড়ির এলাকায় থাকেন গৃহিণী শিল্পী আক্তার। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রথম দিন হালকা জ্বর ছিল। ২ দিন পার হলেও জ্বর কমছিল না। দেখলাম ওষুধে কাজ করছে না। রাতে জ্বর আরও বেড়ে যায়। সকালে দ্রুত হাসপাতালে আসি। এসেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করি। রিপোর্ট পজেটিভ আসে। ডাক্তার হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শ দেয়।”
মুগদা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. নিয়াতুজ্জামান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ও লোকবলের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি রোগী। আমরা কোনো শয্যা দিতে পারব না। এখন লিখিত শর্তে রোগী ভর্তি করছি। চিকিৎসক আছেন মাত্র পাঁচজন। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য নতুন করে কোনো লোকবল নেই।”
তিনি আরও বলেন, “এই হাসপাতালে প্যাথলজিতে প্রতিদিন ৩০০ জনের পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। আমরা সাধারণত প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার রোগীর নমুনা পরীক্ষা করতাম। সেখানে এখন আমাদের করতে হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার পরীক্ষা। আমাদের এখন তিন শিফট চালাতে হচ্ছে। তাই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা অতিরিক্ত রুটিন করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।”
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আর ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৩ জনে।
বুধবার (২ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ঘণ্টায় আরও দুই হাজার ৭১১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ১৩০ জন ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৫৮১ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৩২৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ৮৬৯ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ৪৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজার ১২৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩১ হাজার ৪৬১ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫ হাজার ৬৬৬ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৭ হাজার ৫২৯ জন। ঢাকায় ২৬ হাজার ৩৭৫ এবং ঢাকার বাইরে ২১ হাজার ১৫৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।