রাজধানীর বঙ্গবাজারের এম. এন. গার্মেন্টস নামের একটি দোকানে বসে আছেন মো সবুজ। কিছুক্ষণ পরপর এদিকে ওদিক দেখছেন আর ক্রেতা খুঁজছেন। দোকানের সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেই ক্রেতা মনে করে ডাক দিচ্ছেন। দোকানটিতে কর্মচারী হিসাবে আছেন তিনি।
সবুজ বর্তমানে একটি দোকানের কর্মচারী হলেও, আগে বঙ্গবাজারের তার নিজেরই একটি দোকান ছিল। গত বছর অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়ে এখন তিনি হয়েছেন অন্যের দোকানের কর্মচারী।
কথা হয় সবুজের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এই মার্কেটে নিজের একটা দোকান ছিল। সেদিনের আগুনে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা লোকসান খেয়েছি। কাস্টমারের (ক্রেতা) বাকি টাকা পাইতাম ১৫ থেকে ২০ লাখ। সেই টাকা আর ওঠাতে পারিনি। বাকির খাতাও পুড়ে গেছে সেদিন। পরে আর দোকান দিতে পারিনি। এখন মালিক থেকে অন্যের দোকানের কর্মচারী আমি।”
শুধু সবুজ নয়, সবার কথা প্রায় একই রকম। তাদের কথায় বেশ স্পষ্ট, বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হতে চললেও লোকসানের ক্ষত এখনো শুকায়নি।
আর কিছুদিন পরেই ঈদ। এখানকার ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বঙ্গবাজারে পাইকারি-খুচরা উভয় বিক্রির সুবিধা থাকায় প্রতি বছর রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জমে ওঠে এখানকার ব্যবসা। পাইকারি কাপড় কিনতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খুচরা কাপড় ব্যবসায়ীরা এখানে ভিড় জমান। কিন্তু এবারের চিত্র বিপরীত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের পর অনেক খুচরা ব্যবসায়ীরাই আর পাইকারি কাপড় কিনতে এখানে আসেন না। অগ্নিকাণ্ডের পর কিছুদিন দোকান বন্ধ থাকায় অনেকেই এখন অন্যান্য মার্কেটে ভিড় জমান। আবার কেউ আসেন না বাকি টাকা দিতে হবে এই ভেবে।
এদিকে সরেজমিনে বঙ্গবাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন নতুন মডেলের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে ব্যবসায়ীরা বসে আছেন। ক্রেতার ভিড় না থাকায় অবসর সময় পার করছেন অনেকেই। দুই একজন খুচরা ক্রেতা এলেই ডেকে নিজের দোকানে টানার চেষ্টা করছেন তারা।
সবুজের পাশের দোকানদার এনাম বলেন, “দোতালার দোকান এখন ফুটপাতে নেমে এসেছে, তাই ক্রেতাও কম। তাছাড়া ফুটপাতে দোকানে আগের মতো চাকচিক্য নেই। দোকান ফুটপাতে চলে এসেছে বলে, ক্রেতারা ভালো দাম বলে না। তাই যারা আসছেন তারা কাপড়ের দাম আর আগের মতো বলছেন না।”
জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, “বেচাকেনা খুবই খারাপ। আগুন লাগার পর অনেক ক্রেতা ছুটে গেছে। বাকি টাকা পাবো, এর জন্য মোবাইল করলে অনেকেই ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। কেউ টাকা দেওয়া ভয়ে আসেন না। যে লোকসান আমার এখানকার ব্যবসায়ীরা খেয়েছি, তা পূরণ হওয়ার নয়।”
কাপড় ব্যবসায়ী ইউসুফ বলেন, “বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মাত্র দুই পিস কাপড় বিক্রি করছি। কয়েক বছর আগে এই সময়ের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যবসায় হতো, আগুন লাগার পর ওই ব্যবসা আর নেই। শুনতেছি এসব দোকান নাকি ভেঙে দেবে। কই যাব? কী করব?”