আধা কাটা শসা, আধা পচা কচুর লতি আর কাটা কচু নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসে আছেন সালেহা বেগম। শসার দাম জিজ্ঞেস করতেই বলেন, “৩০ টেহা কেজি মা। আপনি নিলে একদাম ২৫ টেহা।” দাম বেশি কেন? — এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আগে জমা (জায়গার ভাড়া) দিতাম ৫০ টেহা, অহন দিয়োন লাগে ১০০ টেহা। ব্যবসা না হইলে কেমনে দিব?”
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নাখালপাড়া সংলগ্ন রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে একটি বাজার। স্থানীয়দের ভাষায় যা ‘ফকিন্নি বাজার’ বাজার নামে পরিচিত। বাজারের নামটাই হয়ত বলে দেয় কারা এ বাজারের ক্রেতা। কাটা, আধা পচা সবজি কম দামে বিক্রি হয় এ বাজারে। এখানকার ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই নিম্ন আয়ের মানুষ।
এক নারী বিক্রেতার কাছে জানতে চাওয়া হলো, ব্যবসা কেমন চলছে? উত্তরে প্রতিবেদককে বলেন, “ভালা না মায়ো। আগে এইহান থেকাই যা আইতো পোলাপান নিয়া ডাল ভাত খাইয়া চলছি। অহন ব্যবসা কইরাও ভালো একটা খাওন খাইতে পারি নাই। সামনে ঈদ,কেমনে কী করমু? রোজার দিন একটা বাজার করতে পারি না। একশের চাল নেই, যা একটু শাক নিয়া খাই। আজকেও শাক ভাজি দিয়া ভাত খাইয়া আইছি মায়ো।”
ব্যবসা ভালো না তাই বেশি মাল তুলেন না ফকিন্নি বাজার ব্যবসায়ী আনসার আলী। কোনটার দাম কত জানতে চাইলে আনসার আলী বলেন, “প্রতি কেজি টমেটো ২০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, শশা ৪০ টাকা, আলু ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা, মরিচ ৬০ টাকা, লেবু ২০ টাকা হালি।
‘যেটার দাম বেশি সেটা খাবার চায় না কেউ’ যোগ করেন আনসার আলী।
দুই বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করেন আমেজ উদ্দীন। বরবটি বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজিপ্রতি আর পেঁয়াজ ২৫ টাকা। ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি জানান, রোজার মাসে বিক্রি কম, তার ওপর জিনিসপত্রের দাম বেশি।
“সংসার খুব কষ্টে চলে মা, খোদা চাইলে খাই”—এইভাবেই আনমনে বলে চলেন আমেজ উদ্দীন।
বেচাবিক্রি ভালো না, মাছের দাম বাড়তি। তেলাপিয়ার দাম ছিল ১৫০ টাকা কেজি, এখন সেটা ১৮০ টাকা, বলেন বাসা মিয়া। ২৬০ টাকা কেজি দরে রুই মাছ বিক্রি করছেন তিনি, বড় বাজারে যা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি।