অন্যবারের চেয়ে এবার রমজানে নিত্যপণ্যে স্বস্তি মিলেছে। সরকারের কর-শুল্ক হ্রাস, আমদানি বৃদ্ধি ও বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার ফলে এবারের রমজানে ভোক্তারা স্বস্তি পাচ্ছেন। দেড় দশকের মধ্যে প্রথমবার রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কমার রেকর্ড গড়েছে। চাল ছাড়া প্রায় সব পণ্যের দাম নিম্নমুখী, যা গত ১৫ বছরে দেখা যায়নি। বাজার বিশ্লেষকরা এটিকে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন।
তবে রমজানের আগে যে দুটি পণ্য কিনতে গেলে মাথা ‘গরম’ হয়ে যেত, তা হলো আলু, পেঁয়াজ। আলু ৮০ টাকা নেমে এসেছে ২০ টাকায়। আর পেঁয়াজেরও ‘ঝাঁজ’ কমেছে, পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দ্রব্যমূল্য ব্যাপক বেড়েছিল। বিশেষত রমজান মাসে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেত। তবে এবারের রমজানে বাজারের চিত্র আলাদা, চাল ছাড়া সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী। ভোক্তারা বলছেন, গত দেড় দশকের মধ্যে এবার রমজানে পণ্যের দাম নিম্নমুখী এবং কোনো কোনো পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।
আরিফুল ইসলাম নামে একজন ভোক্তা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলীয় ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কারণে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভা বাজার কারসাজিতে সহায়তা করতেন। তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন খেজুর-আঙুরের পরিবর্তে বরই-পেয়ারা দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তেমনিভাবে ইফতারে বেগুনির বিকল্প মিষ্টি কুমড়ার বেগুনি, খেজুরের বিকল্প বরই, আপেলের বিকল্প পেয়ারা দিয়ে ইফতারির পরামর্শ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে এ বছর সরকার অগ্রিম কর অব্যাহতি, কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কমিয়ে শুল্কায়ন করেছে। ফলে খেজুরসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের আমদানি দ্বিগুণ হওয়ায় দাম কমেছে। তবে রমজানের শুরুতে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। লিটারে সয়াবিনের বোতল মিলছে ১৭৫ টাকা ।
নিত্যপণ্যের বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪ সালের রোজায় পেঁয়াজের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, যা বর্তমানে ২০ থেকে ৩০ টাকা, বেগুনের কেজি ছিল ১০০ টাকা, যা এ বছর ৬০-৭০ টাকা। গত বছর টমেটোর কেজি ছিল ৫০-৬০ টাকা, যা এ বছর ২০-৩০ টাকা। গত বছর শসার কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, যা এ বছর ৪০ থেকে ৬০ টাকা। ক্ষীরার দামও কমে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
এদিকে রমজানে কাঁচা সবজি ও তরিতরকারির দাম ক্রেতার নাগালেই রয়েছে। রমজান উপলক্ষে শুরুতে দাম কিছুটা বাড়লেও মাঝামাঝি সময়ে এসে অনেক সবজির দাম কমেছে। কাঁচা মরিচ এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ২০ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০, শিম ৩০-৪০, ফুলকপি ২০, টমেটো ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা, সোনালি ২৮০-২৯০ টাকা, দেশি ৫৫০ টাকা ও হাঁস ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা।