• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে অস্থিরতা ছিল শেয়ারবাজারে


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩, ০৫:৪৯ পিএম
বছরজুড়ে অস্থিরতা ছিল শেয়ারবাজারে

চলতি বছরের পুরো সময়টাই দেশের পুঁজিবাজারে ছিল অস্থিরতা। এ সময়টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও আরেক শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)তে সূচকের উত্থান-পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে লেনদেন তলানিতে নেমে যায়। এছাড়া বাজারে সূচকের উত্থান-পতনে আগ্রহ কমেছে বিনিয়োগকারীদের। এখনো পুরোপুরি ইতিবাচক ধারায় ফিরতে না পারায় বাজার নিয়ে নানা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির সরবরাহ যত বাড়বে, বাজারের গভীরতা তত বাড়বে। শেয়ারবাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। নতুন নতুন কোম্পানির শেয়ার এলে বিনিয়োগের বিকল্প মাধ্যম সৃষ্টি হয়। কিন্তু গত এক বছর শেয়ারবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে বাজারকে এক প্রকার বন্ধ করে রাখা হয়।

তথ্য বলছে, চলতি বছর দেশের শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বড় ধরনের ধস নেমেছে। বিদায়ের পথে থাকা ২০২৩ সালে মাত্র দুটি কোম্পানি আইপিওতে শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে। স্মরণকালের মধ্যে এক বছরে এত কম আইপিও আর দেখা যায়নি। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীর সংখ্যা কমেছে। এক বছরে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা কমেছে ৯১ হাজার ২০৬টি। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে শেয়ারবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও দেখা গেছে।

আইপিও বড় ধরনের ধস
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে ২০২০ ও ২০২১ সাল পর পর দুই বছর শেয়ারবাজার থেকে আইপিও মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উত্তোলন হয়। ২০২২ সালে আইপিও’র সংখ্যা কমে আসে। আর ২০২৩ সালে আইপিওতে রীতিমতো ধস নেমেছে।

জানা যায়,২০২৩ সালে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করা দুই কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। দুটি কোম্পানিই স্থির মূল্য পদ্ধতিতে আইপিওতে শেয়ার বিক্রি করে। এর মধ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংক ৭০ কোটি টাকা এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। অর্থাৎ দুটি কোম্পানির উত্তোলন করা অর্থের পরিমাণ ৮১ কোটি টাকা।

এক বছরে দুটি আইপিও আসা ভালো বাজার বা স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ না বলে দাবি শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, আরও বেশি আসা উচিত। দুটি আইপিও এলে কীভাবে হবে?

মুখ ফিরিয়ে নেন বিনিয়োগকারীরা
পতনের ধারা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। অব্যাহত দরপতনে পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ভাটা পড়ছে। পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখা গেছে। দেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়াতে দেশের বাহিরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)’র পক্ষ থেকে একটি সম্মেলন করা হলেও তা কতটুকু ফলপ্রসু হয়েছে তা দেখার বিষয়।

এছাড়াও মহামারী করোনায় দেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধাক্কা লাগার পর গত অর্থবছর থেকে তা ক্রমেই উন্নতি হতে দেখা যায়। তবে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ তথা দেশের শেয়ারবাজার ও সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখা গেছে বিদেশিদের।

বিও হিসাব কমেছে
গত বছরে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ১২৯টি। যা চলতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর এসে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩২৯টি। অর্থাৎ এক বছরে বিও হিসাব কমেছে ৯১ হাজার ২০৬টি। যা ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯টি। ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১২৩টি। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৯১ হাজার ২০৬টি বা প্রায় ৫ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিও হিসাব খোলার পরিমাণ ৮.৭১ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব খোলার পরিমাণ কমেছে ৪.৬৭ শতাংশ, নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব খোলার পরিমাণ কমেছে ৫.৭৬ শতাংশ।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৯০ হাজার ২২২টি। যা ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২৫ হাজার ২৭৪টি। অর্থাৎ পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৬৪ হাজার ৯৪৮টি বা ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

Link copied!