ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশান বিভাগ। শনিবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা ও পটুয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার (২২ অক্টোবর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান (ডিবি) হারুন অর রশিদ।
গ্রেপ্তাররা হলেন সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল (৩৯), সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর (২৩), আবু ইউসুফ (৪১), দিদার মুন্সী (৩৫), ফেরদৌস ওয়াহীদ (৩৫), আলামিন দুয়ারী দিপু (৪২) ও দাউদ হোসেন মোল্যা (৩৯)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার, র্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাপ, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ও ডাকাতির টাকায় কেনা স্বর্ণালংকার এবং ছিনিয়ে নেওয়া ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
হারুন অর রশিদ বলেন, “ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে ডাকাতি করে আসছিল। এমনকি ডাকাতি শেষে গাড়ির নম্বর প্লেট পরিবর্তন ও ব্যবহৃত মোবাইল ভেঙে ফেলা হতো। এই চক্রটি গত ১০ অক্টোবর বিকালে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এরমধ্যে তারা আইনজীবীদের জন্য আলাদা খরচ রেখে দেন। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছে, কেউ স্ত্রীর গহনা কিনেছে, কেউ আবার জুয়া খেলেছে।”
ডিবি প্রধান বলেন, “গত ১০ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সোহেল আহম্মেদ সুলতান নামের এক ব্যবসায়ীর দেওয়া দুটি চেকের মাধ্যমে উত্তরার আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক থেকে ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন প্রতিষ্ঠানটির হিসাব কর্মকর্তা অনিমেশ চন্দ্র সাহা। ব্যাংক থেকে ভুক্তভোগীর ব্যবসায়ী পার্টনার জাফর ইকবালের প্রতিনিধি রাজনকে ব্যাংকে বসেই সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেন। বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে নিজেদের একটি গাড়িতে করে বনানীতে যাত্রা করে।”
হারুন অর রশিদ বলেন, “গাড়িটি কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোল দিয়ে খিলক্ষেত ডেন্টাল কলেজের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর বিকেল ৪টার দিকে মেরুন কালারের একটি প্রাইভেট কার এসে কোম্পানির গাড়িটিকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। গাড়ি থেকে কালো রঙের র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত ৫ থেকে ৬ ব্যক্তি র্যাবের পরিচয় দিয়ে গাড়িটি থামায়।”
ডিবি প্রধান বলেন, “র্যাব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা গাড়িতে থাকা অনিমেশ চন্দ্র সাহা ও মো. শাহজাহানকে বলে গাড়িতে অস্ত্র আছে— এমন অভিযোগে হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে ফেলেন। এরপর ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, কোম্পানির একটি ব্লাংক চেক ও তিনটি মোবাইল নিয়ে নেন। চোখ বাঁধা অবস্থায় অনিমেশ, শাহজাহান ও কোম্পানির গাড়িচালক আবুল বাশারকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ৩শ’ ফিট এলাকায় ফেলে চলে যান। এই ঘটনায় সোহেল আহম্মেদ সুলতান বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা করেন।”
হারুন অর রশিদ আরও বলেন, “মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম তদন্ত শুরু করে। মামলার বাদীর বক্তব্য, সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ডাকাতি জড়িত দলটিকে শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।”
এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে ডিএমপিসহ দেশের ১৩ জেলায় ১০ থেকে ১৫টি করে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলা রয়েছে।