বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আশিক চৌধুরী। সাম্প্রতিক সময়ে তার বেশ কিছু কাজ আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে স্টারলিংক ও নাসার সঙ্গে চুক্তি অন্যতম। বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর আশিক চৌধুরীকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর থেকেই একের পর এক বাজিমাত করছেন তিনি।
ইতিমধ্যে কর্মদক্ষতা, উপস্থাপনা-শৈলী, যোগ্যতা, বাচনভঙ্গি দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। নেট দুনিয়া থেকে চায়ের আড্ডা, সাধারণ মানুষ থেকে উচ্চবিত্ত প্রায় সব শ্রেণির মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন। এককথায় সর্বত্রই তার প্রশংসার জোয়ার তৈরি হয়েছে। অনেকেই তাকে ‘আসল নায়ক’ বলছেন।
সম্প্রতি আশিক চৌধুরীর কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে তিনি তথ্যবহুল ও সাবলীল ভাষায় দেশের সম্ভাবনাময়ী খাতগুলো তুলে ধরেছেন।
আশিক চৌধুরীর জন্ম চাঁদপুরে, তবে বাবার চাকরির সুবাদে তার শৈশব কাটে যশোরে। তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তিনি। পরে লন্ডনের বিজনেস স্কুল থেকে ফাইন্যান্সে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া তিনি চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট।

আশিক চৌধুরী তার কর্মজীবন শুরু করেন ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে আঞ্চলিক কর্মকর্তা হিসেবে। ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে যোগ দেন এবং সেখানে মার্চ ২০১১ পর্যন্ত ল্যান্ডিং স্ট্র্যাটেজি ও ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং বিভাগে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তিনি দ্য বেঞ্চ নামে বাংলাদেশের প্রথম স্পোর্টস বার সহপ্রতিষ্ঠা করেন।
২০১২ সালের অক্টোবরে আশিক লন্ডনে আমেরিকান এয়ারলাইনসে ফিন্যান্সিয়াল ও স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগ দেন এবং ২০১৯ সালে মে মাসে ইউরোপ ও এশিয়ার ফাইন্যান্স প্রধান হিসেবে পদত্যাগ করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। তিনি গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এইচএসবিসি বাংলাদেশে যোগ দেন এবং পরবর্তী সময়ে সিঙ্গাপুরে এইচএসবিসিতে চলে যান। তিনি বাংলাদেশ ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে পেশাগত কৃতিত্বের জন্য অ্যাওয়ার্ড পান। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ছিলেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আশিক বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন।
আশিক একজন স্কাইডাইভার। মেমফিসে তিনি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ৪১ হাজার ৭৯৫ ফুট (১২.৭৩৯ কিলোমিটার) উচ্চতা থেকে জাম্প করেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অধীনে তিনি ‘গ্রেটেস্ট ডিস্টেন্স ফ্রি ফল উইথ এ ব্যানার বা ফ্ল্যাগ’ রেকর্ড অর্জন করেন। এ ছাড়া তার বাংলাদেশে একটি প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর সাবেক শিক্ষার্থী নাবিলার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এই দম্পতির একটি মেয়ে এবং একটি ছেলে রয়েছে।