আগামী নির্বাচনের আগে আসল খেলা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি আরও বলেন, “হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।”
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় র্যালির আগে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “৭১’-এর খুনিদের সঙ্গে খেলা হবে। আওয়ামী লীগ আন্দোলনে ও নির্বাচনে খেলবে। তারা দুটিতেই হারবে।”
আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় বলেও দাবি করেন তিনি।
ব্যাপক জনসমাগমে গাড়ি নিয়ে আসতে পারেননি বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “আমি মোটরসাইকেলে করে এসেছি। জনগণ ও স্লোগান আর স্লোগান। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা সব ঢেউ আজকে ঢাকা মহনগর আওয়ামী লীগের আজকের এই উত্তাল সমাবেশে। সবাই প্রস্তুত। খেলা হবে ভোট চুরি, দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে। হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। আজকে আমেরিকান দূতাবাস, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো টানাপোড়েন হলে কূটনৈতিকভাবে তাদের সঙ্গে ফয়সালা করব। আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভেদ সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছে বিএনপি।”
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দূতাবাসকে আশ্বস্ত করছি- কূটনীতিকদের জন্য নিরাপত্তার কোনো অভাব বাংলাদেশে নেই। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সবাই নিরাপদে থাকবেন। আজকে যদি কোনো টানাপোড়েন হয়, তার বিচার চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আপনারা এটা বলার কে?”
বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “১০ তারিখে লাল কার্ড দেখায়া দিছে। কি পাইছে? পাইছে অশ্বডিম্ব। ৩০ তারিখেও ঘোড়া ডিম পাড়বে। যদি তারা সফল হয় ঘোড়া সেদিন দিন পাড়বে।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কোনো দিকে কান দেবেন না। শান্তিপূর্ণ অবস্থান।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বিএনপি-জামায়াতকে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আখ্যা দিয়ে দল দুটি দেশের মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র করলে তাদের শেকড় উপড়ে ফেলা হবে। বিজয় শোভাযাত্রায় ঢাকা শহরজুড়ে আনন্দ-উল্লাস সৃষ্টি হয়েছে। এই মিছিলে প্রমাণ করে আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। তিনি দেশের মানুষ মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা থেকে সরাবে। আগামী নির্বাচনে জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে থাকব না হলে থাকব না।”
বিএনপি বহু ষড়যন্ত্র করছে বলে উল্লেখ করেন আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বিএনপি তারপরে দেশের মধ্যে আছেন। কিন্তু এবার ষড়যন্ত্র করলে তারা আর থাকতে পারবে না। দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র করলে বিএনপির শিকড় উপড়ে ফেলা হবে।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, “রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে এনেছি আমাদের এই স্বাধীনতা। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য বারবার চেষ্টা করেছে বিএনপি কিন্তু পারেনি। আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে। তারা চাইলেও সেটি ধ্বংস করা যায় না।”
একই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ হলো এদেশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। আমাদের কেউ লাল কার্ড দেখাতে পারে না। যারা লাল কার্ডের কথা বলেছিল তারাই লাল কার্ড পেয়ে চলে গেছে।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “দেশের মধ্যে থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ষড়যন্ত্রে লিপ্ত স্বাধীনতা বিরোধীদের বাংলাদেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে। যারা দেশের মধ্যে থেকে স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চায় তারাই স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি। এই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-বিএনপি কখনো দেশের ভালো চায় না। স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। তারা যতদিন বাংলাদেশে থাকবে ততদিন দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র করবে। যেভাবে দেশে স্বাধীন করে দেশের মধ্যে উল্লাস করেছিলাম, সেভাবেই বিএনপি-জামায়াতকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে আবার বিজয়ের মাসে উল্লাস করা হবে।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ মানুষ আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, “বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল। তাদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ কখনো নিরাপদ নয়। তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এদেরকে প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।”
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুরসহ প্রমুখ।
এছাড়াও শোভাযাত্রায় যোগ দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়। বিজয় শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। আরও রয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের ব্যানারে নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছেন বিজয় শোভাযাত্রায়।
মিছিলটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী ও অঙ্গসংগঠনের নারী নেত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নেতাকর্মীরা কেউ ট্রাকে, কেউ মিছিলে অংশ নিয়েছেন পায়ে হেঁটে। মিছিলে দেখা গেছে লাল-সবুজের আবহ।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে একই স্থান থেকে ‘বিজয়ী বাংলার স্বর্ণজয়ন্তী বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা বিজয় মিছিল শুরু করেন।