বর্ষপঞ্জিকার পৃষ্ঠা উল্টে শেষ হতে চলেছে আরও একটি বছর। আর মাত্র কয়েকদিন পরই পৃথিবী স্বাগত জানাবে ২০২৩ সালকে। অন্যদিকে ২০২২ সালকে বিদায় জানানোর প্রহরে বছরটিকে ঘিরে চলছে নানা হিসেব। কেমন ছিল ২০২২ সাল? নানা ঘটনায় আলোচিত বছরটি বাংলাদেশের জন্যও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেশ ভুগতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
২০২২ সালে অন্যান্য খাদ্যপণ্যের মতো দাম বেড়েছে আটা ও ময়দারও। সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্যতালিকায় আটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চলতি বছর এই আটা ও ময়দার দাম দফায় দফায় বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
২০২১ সালের শেষে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। একই রকমভাবে যে ময়দার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়।
টিসিবির দেওয়া তথ্য মতে, এক বছরের ব্যবধানে বাজারে আটার দাম ৭৩ শতাংশ ও ময়দার দাম ৫৭ শতাংশ বেড়েছে।
বছরের শুরুতে আটার দাম ৩৫ টাকা দিয়ে শুরু হলেও ৩ মাসের ব্যবধানে মার্চ মাসে আটা-ময়দা খোলা ও প্যাকেট—দুই ধরনেই কেজি প্রতি দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা করে বেড়েছিল। খোলা আটা এবং ময়দা ৩ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৮ ও ৫৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত অবস্থায় পণ্য দুটি বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকা ও ৬৩ টাকায়।
মার্চের পর আরেক দফায় মে মাসে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ৮-১০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৮-৫০ টাকা। একই রকমভাবে খোলা ময়দার দামও পাল্লা দিয়ে ৫-৬ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি দাম হয়েছিল ৫৮-৬০ টাকা।
আগস্ট মাসের মাঝামাঝি এসে আরেক দফায় বাড়ে আটা ময়দার দাম। খোলা আটা ৫-৭ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি ৫২-৫৫ টাকা এবং খোলা ময়দা ২-৫ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি ৬২-৬৫ টাকা বিক্রি হয়েছিল। একইরকম ভাবে প্যাকেটজাত আটা ক্ষেত্রেও বেড়েছিল ৮-১০ টাকা ও ময়দার ক্ষেত্রে বেড়েছিল ৬-৮ টাকা। এই হিসেবে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে আটার সবোর্চ্চ ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ও ময়দার দাম ৫৭ শতাংশ বেড়েছে।
সারা বছর পর্যায়ক্রমিকভাবে আটা ময়দার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর বছর শেষে এখন খোলা আটার দাম হয়েছে ৬০ ও ময়দার দাম হয়েছে ৭০ টাকা। একইভাবে ১৫ টাকা বেশিতে প্যাকেটজাত প্রতি দুই কেজির দাম হয়েছে আটা ময়দার দাম ১৫০ ও ১৬৮ টাকা।
কেন এই দাম বৃদ্ধি?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে দাম বাড়তি এবং ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা আটা-ময়দার বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গম আমদানি ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে আমদানি খরচ।
আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহণ খরচের বাড়তি চাপ এবং একইভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে একদিন কারখানা বন্ধ রাখার ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। এই সব খরচ সমন্বয় করতেই বাড়ানো হয় আটা ময়দার দাম। তাছাড়া কানাডা বাদে বাংলাদেশের গম আমদানির প্রধান উৎস রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এপ্রিল থেকে বিশ্ববাজারে গমের অস্থিরতা শুরু হয়। তখন বাংলাদেশেও গম আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশে দফায় দফায় গমের দাম বাড়তে থাকে।