• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বন্যা-নদী ভাঙনে কেঁদেছেন উত্তরের মানুষ


সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২, ০৩:৪২ পিএম
বন্যা-নদী ভাঙনে কেঁদেছেন উত্তরের মানুষ

চলতি বছর রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। এ জেলাগুলোতে বন্যা  কখনো বয়ে আনে আশীর্বাদ আবার কখনো অভিশাপ। তবে আশীর্বাদের থেকে এখানকার বন্যার অভিশাপটা একটু বেশি। কেননা বন্যার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময় এখানকার মানুষদের লড়তে হয় নদী ভাঙন নামের আরেক দানবের সঙ্গে। এ জেলায় নদ-নদীগুলো পানি কমা-বাড়ার লীলা আর নদী ভাঙনের খেলা প্রায় সারা বছর চলতে থাকে।

বাঁধ সংস্কারে সরকারের দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম না থাকা, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা থাকলেও তা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সমন্বয় ও তদারকিও না থাকাসহ নানাবিধ কারণে বন্যার ক্ষতি আর ভাঙনেই সঙ্গী এ অঞ্চলের মানুষের।

এ বছরে বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বিপদাপন্ন লোকের সংখ্যা বিস্ময়করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রংপুর,গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দেওয়া তথ্য মতে, এ বছরের বন্যায় রংপুরে সড়ক ও সেতুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ হাজার ৩২০ হেক্টর জমির ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শাকসবজির।

গাইবান্ধায় মৎস্য ও অবকাঠামোগত খাতে ক্ষতি হয়েছে ২৯ কোটি টাকা। বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে কয়েক হাজার বিঘার রোপণ করা আমন। দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের। এ বছর তিন দফা বন্যা আর ভারি বর্ষণে গাইবান্ধা জেলার প্রায় ৬ হাজার কৃষকের ২৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বন্যায় সাতটি উপজেলার সাত হাজার ৫০টি পুকুর ও মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ছয় হাজার ২৯০টি পুকুর এবং ৭৬০টি মৎস্য খামার রয়েছে।

এ দিকে মৎস্য বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, বন্যায় মৎস্য খামারের দুই হাজার ৬০ মেট্রিক টন মাছ এবং এক কোটি ১১ লাখ মাছের পোনা বন্যায় ভেসে গেছে। এ নিয়ে মৎস্য খাতে সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি টাকা ৭৯ লাখ টাকা।

কুড়িগ্রামে মৎস্য ক্ষেত্রে ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ৭৪২টি পুকুরের ৭০৫ জন মৎস্য চাষির ১১৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। আর ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল বিনষ্ট হওয়ায় কৃষিতে ১২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে ৮০ হাজার ৩৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

লালমনিরহাটে এ বছর বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা নিরূপণ করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। সেতু, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, খামার ও ফসলের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দপ্তরগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এবারের বন্যায় লালমনিরহাট এলজিইডির আওতায় ১৮৪ কিলোমিটার সড়কপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে ৫৩টি সেতু কালভার্ট। এতে আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ১৬৫ কোটি। সড়ক ও জনপদের জাতীয় মহাসড়কের ৪০ কিলোমিটারে ক্ষতির পরিমাণ ৫৩ কোটি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩টি বাঁধের ২ কিলোমিটার বিলীন ও ৩টি বাঁধের ১০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে ১৯৪ কোটি, কৃষি বিভাগের ৩১ হাজার ১৩৫ হেক্টর রোপা আমন ও ২৬৫ হেক্টর সবজি খেত তলিয়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ৮৫ কোটি টাকা।

লালমনিরহাট রেল বিভাগের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৪০ কিলোমিটার রেলপথের ৯টি পয়েন্টে টেকসই মেরামতে প্রয়োজন ৭২ কোটি টাকা। এছাড়াও ৭ হাজার ৭০২টি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে মৎস্য বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি ১১ কোটি। ৬৫ হাজার হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল বন্যা আক্রান্ত ও ১৬টি খামার বিনষ্ট হয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ ৭৮ লাখ এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, কমিউনিটি ক্লিনিক ভেঙে গিয়ে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

এছাড়াও ২০২২ সালে কয়েক দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রংপুর বিভাগের এ চার জেলার ১৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গাইবান্ধায় আছে ১০২টি, কুড়িগ্রামে ৮৬টি, রংপুরে ১টি ও লালমনিরহাটে ৩টি।

Link copied!