ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। সেই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শিলাস্তি রহমান ঘিরে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রমতে, শিলাস্তি রহমান এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী। শাহীনের পরিবার থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। শাহীন মাঝে মাঝে বাংলাদেশে আসেন। এলেই শিলাস্তি রহমানকে নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে যেতেন কলকাতায়। কিছুদিন থেকে একসঙ্গে ফিরে আসতেন। সূত্রমতে, বছরের পর বছর ধরে তারা কলকাতায় আনন্দভ্রমণ করছেন।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শিলাস্তি রহমানের এক বান্ধবীর নাম ওড়িশা। তার সঙ্গেও ঘনিষ্ট সম্পর্ক আখতারুজ্জামান শাহীনের। ওড়িশাকে নিয়েও বেশ কয়েকবার শাহীন কলকাতায় গেছেন। বেশ কিছুদিন থেকে আবার দেশে ফিরেছেন।
বিবিএ’র ছাত্রী
গোয়েন্দা সূত্রমতে, ২০ বছর বয়সী শিলাস্তি রহমান একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। তার পরিবার থাকে মফস্বল শহরে। তবে তিনি বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায়।
ঘনিষ্ট সূত্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শিলাস্তি রাজধানীর উত্তরায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। উত্তরাতেই একটি আবাসিকে থাকেন। তবে ঘনিষ্ট সূত্রের দাবি, বিত্তশালীদের ডেরায় গিয়ে শিলাস্তি নিজেও অভিজাত ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হয়ে গেছেন।
হতে চেয়েছিলেন মডেল
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্মার্ট তরুণী শিলাস্তি রহমান হতে চেয়েছিলেন একজন মডেল। নিজেকে সেভাবেই তৈরি করছিলেন। নিজের নামও বদলে রেখেছিলেন ‘সেলে নিস্কি’। বিভিন্ন পার্টিতে গিয়ে ড্যান্স করতেন।
তবে পুরান ঢাকার বিত্তশালী আক্তারুজ্জামান শাহীনের খপ্পরে পড়েই শিলাস্তি পা রাখেন অন্ধকার জগতে। মার্কিন পাসপোর্টধারী শাহীন দেশে এলেই তাকে সঙ্গ দিতেন। তার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন দেশে ও দেশের বাইরে। শাহীনের ফ্ল্যাটের বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিতেন।
এমপি আনার হত্যা মামলায় তদন্তে জড়িত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, শিলাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেজন্য জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে তাকে অনেক রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
কিলিং মিশনে কলকাতায়
গোয়েন্দা সূত্রমতে, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন ও মূল ঘাতক আমানউল্লাহ ওরফে চরমপন্থি নেতা শিমুল ভুইয়ার সঙ্গে শিলাস্তি রহমান গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা থেকে বিমানে কলকাতায় যান। সেখানকার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয় সেই ফ্ল্যাটেই থাকেন।
হত্যাকাণ্ডের পর ১৫ মে আমানুল্লাহর সঙ্গে একই বিমানে ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপরই গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন শিলাস্তি রহমান। গত শুক্রবার (২৪ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয় শিলাস্তিকে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত শিলাস্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অঝোরে কান্না
তবে রিমান্ড শুনানির আগে আদালতের এজলাসে আসামিদের ডকে উঠেই অঝোরে কান্না শুরু করেন শিলাস্তি রহমান। রিমান্ড শুনানির একপর্যায়ে একজন আইনজীবী ওকালতনামায় শিলাস্তির স্বাক্ষর নিতে গেলে তিনি বলেন, “আমি কেন স্বাক্ষর করব? আমি কি আসামি নাকি? এসব বিষয়ে কিছু জানি না।”
শিলাস্তির আচরণ আর হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকা নিয়ে যেমন রহস্য রয়েছে, তেমনি তার বক্তব্যও আবেগময়। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই চাঞ্চল্যকর হত্যকাণ্ডের ঘটনায় তরুণীর ভূমিকা কতখানি তা রহস্য হয়েই আছে এখনও।