একটা সময় ছিল, যখন হাতে পরিহিত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজগুলো পরিচালনা করতেন। কিন্তু আজকের দিনে ঘড়ির গুরুত্ব একটু ভিন্ন।
ঘড়ির ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা হয় মনসুর নামের এক ঘড়ি ব্যবসায়ী সঙ্গে। দীর্ঘদিনের ব্যবসার অভিজ্ঞতা জানিয়ে সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “মোবাইলে ঘড়ি, টিভি চ্যানেলের নিচেও ঘড়ি। এখন আর বয়স্ক মানুষরা ঘড়ি কিনতে আসেন না। আর বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের হাতে থাকা ঘড়ি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তারা সময় দেখার জন্য ব্যবহার করে না। ফ্যাশন করার জন্যই বেশি ব্যবহার করেন।”
শুধু মনসুর রহমান নয়। তার মতো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ঘড়ি ব্যবসায়ীদের কথাগুলো ঠিক একই রকম। যারা সবাই মনে করেন, ঘড়ির গুরুত্ব এখন সময়ে নয়, বরং ফ্যাশনে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নানা প্রতিকূলতায় ভালো নেই এসব ঘড়ি ব্যবসায়ীরা। আগের চেয়ে ঘড়ির দাম বেশি, ক্রেতা সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজার, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বিপাকে পড়েছেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান ঘড়ির ব্যবসায় দোকান ভাড়ার খরচ উঠানো খুবই কঠিন।
ঘড়ি ব্যবসায়ী নুর আলম বলেন, “ঘড়ির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানি কম। এর মাঝে যে টাকা বিক্রি হয়, তাতে দোকান ভাড়া, সংসার খরচ চালাতে কষ্ট হয়। মানুষ ঘড়ি কিনবে কীভাবে। সবার পেটে ক্ষুধা, ঘড়ি নিয়ে নিশ্চই ফ্যাশন করতে ঘুরবে না।”
প্রায় ৪০ বছর ধরে ঘড়ির ব্যবসা করেন সালাউদ্দীন। ব্যবসায়ীক অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “হাত ঘড়ি বেশি বিক্রি হয়। দেয়াল ঘড়ি তেমন হয় না। এসব বিক্রি হওয়া ঘড়িগুলো চীন থেকে আসে। আগে আসত জাপান, সুইজারল্যান্ড থেকে। এখনকার ঘড়ির গুণগত মান ভালো না। আগে মানুষ ঘড়ি কিনতো সময় দেখার জন্য। এখন ঘড়ি কেনে (ক্রয়) ফ্যাশনের জন্য। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায়, মানুষ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কেনে। ফ্যাশনের জন্য অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে চায় না। সবমিলিয়ে ঘড়ির ব্যবসাতে আর মজা নেই।”
মিঠুন নামে আরেক ঘড়ি ব্যবসায়ী বলেন, “বর্তমান যুবকরা ফ্যাশন এবং চাকরিজীবী মানুষ সময় দেখার জন্য ঘড়ি ব্যবহার করে। এরমধ্যে পুরুষ ক্রেতাই বেশি। ঘড়ির ব্যবসা আগের মতো হয় না। বাজারে দাম বেশি, সময় মোবাইলে দেখা যায়। টিভির দিকে তাকালে সেখানেও ঘড়ি দেয়া হয়েছে। এমন নানার কারণে দিন দিন ঘড়ির ব্যবসা কমেছে।”