উচ্চ মূল্যের কারণে বাজারে আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ডিম। সবকিছুর দামে যখন নাভিশ্বাস, তখন থেমে নেই ডিমের দাম। গত ১৫ দিনে ডিম প্রতি ডজন ১৫০ টাকা আর হালি বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা দরে। একশ ডিমের দাম ছিল ১২০০ টাকার বেশি।
মূল্যবৃদ্ধির সিন্ডিকেটের বাজারে ডিমের এই উচ্চমূল্য যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, “হাঁসসহ অন্যান্য ডিমের দাম বৃদ্ধি না পেলেও মুরগির ডিমে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।”
বুধবার (১৬ আগস্ট) সরেজমিনে কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা ও তেজগাঁও এলাকার পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই স্বস্তির খবর।
বুধবার বাজারে লাল রঙের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১৪০ টাকা। একইভাবে প্রতি হালি ৫০ টাকা এবং প্রতি একশ ডিম বিক্রি হয়েছে ১১৮০ টাকায়। ১৫ দিন আগে, এই ডিম বাজারে বিক্রি হয়েছিল ডজন ১৫০ টাকা দরে। একইভাবে প্রতি হালি ৫৫ টাকা এবং প্রতি একশ ডিমের দাম ছিল ১২২০ টাকা।
অপরদিকে, সাদা রঙের ডিম প্রতি হালি ছিল ৪৫ টাকা। সেখানে বুধবার ১ টাকা কমে এই ডিম বিক্রি হয়েছে ৪৪ টাকায়। একইভাবে ডজন ছিল ১৪৫ টাকা; বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা এবং একশ ডিমের দাম ছিল ১১৮০ টাকা; বিক্রি হয়েছে ১১৫০ টাকায়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, “কার্যকরী পদক্ষেপে বাজারে কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম।” আর ব্যবসায়ীদের দাবি, “কয়েকদিনের মধ্যে বাজারে ফিরবে পূর্বের সহনীয় চিত্র।”
ডিম কিনতে আসা মহেশ বাবু বলেন, “কয়েকদিন আগে ডিমের দাম অনেক বেশি ছিল। আজকে কিছুটা কম দামে পেলাম। সকলেই ডিম খায়। মধ্যবিত্তদের ডিম ছাড়া তো চলেই না। সে কারণে ডিমের দাম আরও কম হলে ভালো হয়। আমাদের আয়ের ওপর ভর করে বাড়ি ভাড়াসহ সব খরচ চালাতে হয়। দাম বেড়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ আমি ডিম কিনি (ক্রয়) নাই। আগে কিছু ছিল, সেটা দিয়ে চালিয়ে নিয়েছি।”
ভবেশ নামে এক ডিম ক্রেতা বলেন, “এখন ডিমের দাম ১৫০ টাকা। এর দাম সর্বোচ্চ ১২০ টাকা ডজন হওয়া দরকার ছিল। ১২০ টাকা হলে, সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। কয়েকদিন আগের কথা কী বলবো? গত ১৫-১৬ দিন ডিমে হাত দেয়া যাচ্ছিল না। আপনি একটু চিন্তা করলে দেখবেন, মাছ-মাংসের বাজার অনেক চড়া হওয়ার কারণে, ডিমটাই বেশি খায় মানুষ। তাই ডিমের বাজার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা দরকার।”
শাহ্ আলী ট্রেডার্সের স্বতাধিকারী আব্দুল আলিম বলেন, “কয়েকদিন ধরে ডিমের দাম বেশি। আজকে বাজারটা কমছে। ডিমের দাম বেশি যখন ছিল, তখন ব্যবসায়ীরা বলছিল, মুরগির খাবারের দাম বেশি। তাই ডিমের দাম বেশি। তাছাড়া উৎপাদন কম। এখন শুনি সবকিছু ঠিক হয়েছে। তাই ডিমের দাম কমছে। এভাবে চললে, কয়েকদিনের মধ্যে আরও দাম কমবে বলে আশা করছি।”
মজিবর রহমান নামের অপর এক খুচরা ডিম বিক্রেতা বলেন, “ডিমের দাম কমছে ঠিকই। কিন্তু আগের মত ক্রেতা তেমন একটা নেই। হয়তো ডিমের দাম কমার খবর সকলে পায়নি। কয়েকদিনের মধ্যে ডিমের বাজারে ক্রেতা সমাগম বাড়বে।”
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “বাজার তদারকির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। ১৮০ টাকা পর্যন্ত বাজারে দাম উঠলেও, বর্তমানে ১৫০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। আমরা আমাদের মতো করে একটি গবেষণা চালাচ্ছি। ডিমের উৎপাদন খরচের কথা বলা হচ্ছে ১০ টাকা ৩০ পয়সা। আসলে ডিমের উৎপাদন খরচ কত, সেটা যদি বের করতে পারি, তবে ডিমের দাম আরও কামাতে পারবো।”