“গুমের সরকার পালিয়ে চলে গেছে। গুমের সরকার আমার ছেলেকে গুম করেছে। নানা জায়গায় আমার ছেলেকে খুঁজেছি, কিন্তু কোনো খোঁজ পাইনি। আমার ছেলে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করবে, এই আশা ছিল। কিন্তু গত ১১ বছর ধরে তার অপেক্ষায়। তার একটি প্যান্ট আমি এখনো আগলে রেখেছি। সে কখন এসে বলবে মা আমার প্যান্টটা দাও।”
অশ্রুসিক্ত চোখে ছেলের ছবি হাতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন ১১ বছর আগে গুমের শিকার আব্দুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী। ২০১৩ সালে গুমের শিকার হন তার ছেলে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্বজনহারাদের নিয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠন।
গত ১৫ বছরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে পেতে এবং গুমের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চলতি বছর গুমের শিকার থেকে রক্ষা পাওয়া এম রানা নামের এক ব্যক্তি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাকে বিবাহবার্ষিকীতে ধরে নেয়। নানা ধরনের নির্যাতন করে। আমি আমার চাকরি হারিয়েছি। মানবেতর জীবনযাপন করছি। এখানে যারা আছেন, তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তাদের ক্ষতিপূরণ চাই। যারা গুমের সঙ্গে জড়িত, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।”
এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর নতুনভাবে যে জাগরণ তৈরি হয়েছে, এটিকে অনেকেই স্বাধীনতা বলে আখ্যায়িত করছেন। কিন্তু এমন সময়েও যদি স্বজনহারা ব্যক্তিরা তাদের স্বজনদের ফিরে না পায়, তাহলে সেই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, দ্রুততম সময়ে স্বজনদের কাছে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিন।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সৌভাগ্য যে আয়নাঘর থেকে মাইকেল চাকমা ফিরে আসতে পেরেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেকেই ফিরে আসেননি। দুঃখ হয়, যখন আমরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে কথা বলে এসেছি...তখন মন্ত্রীরা বলতেন, ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদেরও নাকি আমরা গুম হিসেবে বিবেচনা করছি।”
গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ রেখে মান্না বলেন, “আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, বিগত সময় থেকে শুরু করে আপনাদের কাছে গুম হওয়ার যত খবর আছে, সবগুলো প্রকাশ করুন, যা দেশপ্রেমিক হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।”
কেবল ঢাকাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘আয়নাঘর’ রয়েছে বলেও দাবি করেন মাহমুদুর রহমান মান্না।