কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ছাত্র হত্যা, নিপীড়ন, গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনায় সমাবেশ, বিক্ষোভ ও মৌন মিছিল কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টির মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকদের সমাবেশ শুরু হয়। বৃষ্টির কারণে শুরুতে অল্পসংখ্যক শিক্ষক–শিক্ষার্থী সমাবেশে অংশ নিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অনেকেই জড়ো হতে থাকেন।
শিক্ষকরা বলেন, “গর্দান হত্যার বিচার তলোয়ারের কাছে চাইতে পারি না। সরকারের যে পুলিশ বাহিনী সাধারণ ছাত্র–জনতাকে হত্যা করেছে, তারা এ পুলিশের বিচার করতে পারবে না। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এসব ঘটনার বিচার করতে হবে। সরকারকে এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।”
শিক্ষকরা আরও বলেন, “প্রতিবাদ করলেই বিভিন্ন ট্যাগ (তকমা) লাগানো হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই খুলে দিতে হবে। হত্যাকাণ্ডের বিচার এ সরকার করবে না। কারণ, তারা নিজেরাই খুনি।”
বেআইনিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, “সমন্বয়কদের ছেড়ে দিতে হবে। আর একটাও গুলি করবেন না। সরকারের উন্নয়নের খোলস, চেতনার খোলস ভেঙে পড়েছে। যে সরকার পুলিশের কাঁধে ভর করে থাকে, তারা এ পুলিশের বিচার করতে পারবে না। চেতনার ব্যবসা, মামলাবাজি বন্ধ করতে হবে।”
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশে বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও পপুলেশনস সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওয়াসিমা ও বায়েজিদ ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশরেফা অদিতি হক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিউপি) শিক্ষক ইমরুল আজাদ, নর্থ সাউথের শিক্ষক রিয়াসাত খান প্রমুখ।
শিক্ষকেরা সমাবেশে থেকে কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আটক শিক্ষার্থীসহ অন্যদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। কারফিউ তুলে নিতে হবে। ব্লক রেইডের নামে গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।
সমাবেশ থেকে শিক্ষকরা শুক্রবার (২ আগস্ট) বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ‘দ্রোহযাত্রা কর্মসূচি’ ঘোষণা করেছেন। তারা দ্রোহযাত্রা নিয়ে প্রেসক্লাব থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাবেন। এতে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে আহ্বান জানান তারা।