বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে মহাপরিকল্পনা, তাতে সারা দেশের সব জেলায় রেল নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০৪৫ সালের মধ্যে দেশের সব জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের পথেও এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে রেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়েছে আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত রেল লাইন। শিগগিরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে এই রেলপথ উদ্বোধন করবেন।
আগামী ১০ অক্টোবর দেশের তিন মেগা রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা, দোহাজারী-কক্সবাজার এবং খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যদিয়ে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে আসবে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
রেলওয়ে কৃর্তপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আখাউড়া-আগরতলা রেলযোগাযোগ চালু হলে আগরতলা থেকে কলকাতার দূরত্ব ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার থেকে কমে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার হবে।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, “দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোয় পর্যায়ক্রমে দ্রুতগতির রেলপথ স্থাপন করে হাইস্পিড রেলপথ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সেকশনে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে কুলাউড়া-শাহবাজপুর ও ফেনী-বিলোনিয়া রেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার ও নেপালের মধ্যে রেল নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নের পরিকল্পনাও রয়েছে।”
রেলওয়ে সূত্র বলছে, বর্তমানে ৪৩টি জেলায় রেলপথ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলাকে এই নটওয়ার্কের আওতায় আনতে ৩০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান করেছে রেলওয়ে। সেই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ২০৪৫ সালের মধ্যে ৬৪ জেলা রেলপথের আওতায় আসছে।
রেলওয়ের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সমীক্ষার কার্যক্রম চলমান। এর মধ্য দিয়ে সাতক্ষীরা, বরিশাল, রাঙ্গামাটি, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও মেহেরপুর রেলপথের আওতায় আসবে। এর পরবর্তী ধাপে লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, মানিকগঞ্জ, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলাও নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “সড়কপথের মতো রেলপথও থাকবে দেশের সব জেলায়।”
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আরো জানান, ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত, দোহাজারী-কক্সবাজার এবং খুলনা-মোংলা রেলপথের উদ্বোধন করবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আখাউড়া-লাকসাম আন্তঃদেশীয় রেলপথটিও উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
রেলপথমন্ত্রী বলেন, “মোংলা-খুলনা রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কারণ শুধু সারাদেশের সঙ্গে নয়, রেলপথটি আন্তর্জাতিক রেল রুট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে।’
আবার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথটি খুলে গেলে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য বিরাট সুখবর বয়ে আনবে। এ রেলরুটটি চালু হলে ঢাকা থেকে সরাসরি সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে যাওয়া সুবিধা হবে ভ্রমণ পিপাসুদের। বাড়বে ব্যবসা বাণিজ্য। আবার পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বিরাট উপকার হবে, যাতায়াত, ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে বলেও জানান রেলমন্ত্রী।
রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকায়। কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকায় মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে খুলনা পর্যন্ত রেললাইন অক্টোবরের প্রথম ভাগে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এক যুগ আগে অনুমোদিত এই প্রকল্প ভারতীয় ঋণে (এলওসি) বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চার দফা সময় বাড়িয়ে ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে সবকটি প্রকল্প অক্টোবরে উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে রেলওয়ের পক্ষ থেকে।