কোস্টগার্ড উপকূলীয় জনগণের কাছে আস্থার প্রতীকে পরিণত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, “প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ যাবতীয় অবৈধ কার্যক্রম, মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ, অস্ত্র ও মানব পাচার, অবৈধ চোরাচালান, জলদস্যুতা, অবৈধ মৎস্য আহরণ রোধসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম প্রতিহত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তারা নিয়মিত টহল দ্বারা সমুদ্র ও নদীপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় পতিত বিপদগ্রস্ত নৌযান ও নাবিকদের উদ্ধার কার্যক্রমও পরিচালনা করে যাচ্ছে।”
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও কোস্ট গার্ড দিবস-২০২৫ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় জনগণ, মৎস্যজীবী এবং নৌযান মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কাজে এ বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কোস্ট গার্ডের সদস্যগণ বিপন্ন মানুষের জীবন রক্ষা এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষ অবদান রাখছে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোস্টগার্ডের সার্বিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে কোস্ট গার্ডের আধুনিকায়নে সম্প্রতি আর্মারড বা বুলেট প্রুফ সুবিধা সম্বলিত হাই স্পিড বোট, গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনসহ সার্ভেল্যান্স ড্রোন ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া কোস্টগার্ডের জন্য আগামীতে হেলিকপ্টারসহ রেসকিউ ড্রোন ক্রয়েরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “এ বাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়েছে ১৭৯টি আধুনিক ও দ্রুতগামী জলযান যা বাহিনীটির অভিযানিক সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। নির্মিত হয়েছে বাসস্থান, ব্যারাক ও প্রশাসনিক ভবন। গভীর সমুদ্রে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে কোস্ট গার্ডের জাহাজসমূহে স্থাপিত হয়েছে ভিস্যাটনেট (VSATNET) সিস্টেম। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় ইনশোর প্যাট্রল ভেসেল, ফ্লোটিং ক্রেন, ট্যাগ বোট এবং বিভিন্ন ধরনের হাইস্পিড বোট কোস্ট গার্ড-এর বহরে যুক্ত করা হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সম্প্রতি কোস্ট গার্ড বহরের পুরাতন ৯টি জাহাজের প্রতিস্থাপক হিসেবে দেশীয় শিপইয়ার্ডে ৯টি প্যাট্রোল ভেসেল নির্মাণের প্রকল্প সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এই আধুনিক জাহাজসমূহ বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বহরে সংযোজিত হলে এ বাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।”
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, “ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড একটি দক্ষ, আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে টেকসই অবদান রেখে চলেছে।”