মাসের পর মাস নিয়ন্ত্রণহীন দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। একের পর এক সব পণ্যের ঊর্ধমুখী দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির রাশ টানতে পারছে না কেউ। বাজারে গেলে দামে-দামে দম থেমে যায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের। প্রতিকারহীন বাজারের এই অস্থিরতায় শুধু হাসফাসের দীর্ঘশ্বাস ভোক্তার।
গত কয়েক মাস ধরে চলছে বাজারের এই অস্থিরতা। দাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় রয়েছে একবারের জন্য ব্যবহার করা টিস্যুও। ক্রেতাদের দাবি- এই পণ্যটির দাম কমানো দরকার।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে কথা হয় মাহবুল হাসান শিপন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। কাঁঠাল বাগান থেকে এই মার্কেটে এসেছেন টিস্যু কিনতে। তিনি বলেন, “আগে একটি টিস্যুর বক্স কিনতে পারতাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। সেটি এখন কিনতে হয় ৮০ টাকারও বেশি দাম দিয়ে। শুধু তাই নয়, প্রকারভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে টিস্যুর দাম। যে জিনিস একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয়। সেই টিস্যুর দামেও অস্থিরতা। এই পণ্যটির দাম কমানো দরকার।”
মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বসুন্ধরা, সোনালী, ফ্রেশ এবং পারটেক্স নামের চারটি কোম্পানির টিস্যু রয়েছে। বেশি চাহিদা বসুন্ধরা কোম্পানির টিস্যুগুলোর। এসব টিস্যু রয়েছে ৬ রকমের । এগুলো হলো- টয়লেট, বক্স, হ্যান্ড টাওয়েল, কিচেন, ন্যাপকিন এবং রেস্টুরেন্ট টিস্যু।
পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত একবছরে খুচরা বাজারে প্রকারভেদে টিস্যুর প্রত্যেক আইটেমে দাম বেড়েছে ৩ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। আর পাইকারিতে বেড়েছে ২ থেকে ১০ টাকা।
টয়লেট টিস্যু প্রতি প্যাকেট খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। বক্স টিস্যু ৮০ টাকা, হ্যান্ড টাওয়েল টিস্যু ১০০ টাকা, কিচেন টিস্যু ৮০ টাকা, ন্যাপকিন টিস্যু ৭০ টাকা এবং রেস্টুরেন্ট টিস্যু ৬০ টাকা।
জানা যায়, একবছর আগে খুচরা বাজারে টয়লেট টিস্যু প্রতি প্যাকেটের দাম ছিল ২২ টাকা। বক্স টিস্যু ৭০ টাকা, হ্যান্ড টাওয়েল টিস্যু ৯০ টাকা, কিচেন টিস্যু ৬০ টাকা, ন্যাপকিন টিস্যু ৬০ টাকা এবং রেস্টুরেন্ট টিস্যু ৫৫ টাকা।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে টয়লেট টিস্যু বিক্রি হচ্ছে প্রতি প্যাকেট ১৮ টাকা ৫০ পয়সায়। বক্স টিস্যু ৬৫ টাকা, হ্যান্ড টাওয়েল টিস্যু ৮৫ টাকা, কিচেন টিস্যু ৭০ টাকা, ন্যাপকিন টিস্যু ৫৫ টাকা এবং রেস্টুরেন্ট টিস্যু ৫০ টাকা।
আর একবছর আগে পাইকারি বাজারে টয়লেট টিস্যুর দাম ছিল ১৬ টাকা ৫০ পয়সা। বক্স টিস্যু ৫৬ টাকা ৫০ পয়সা, হ্যান্ড টাওয়েল টিস্যু ৭৫ টাকা, কিচেন টিস্যু ৬০ টাকা, ন্যাপকিন টিস্যু ৫০ টাকা এবং রেস্টুরেন্ট টিস্যু ৪০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, চলতি বছরে দুই ধাপে বেড়েছে টিস্যুর দাম। তবে গত মাসের চেয়ে দাম কিছুটা কমলেও আগের দামে এখনো আসেনি। বিক্রেতারা বলছেন, টিস্যু তৈরির কাঁচামালের দাম কমেছে। তাই দামে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।
রমিজদ্দিন নামের আরেক টিস্যু ক্রেতা বলেন, “টিস্যু দিয়ে হাত মুছলে তৈলাক্তভাব থাকে না। তাই আমার পরিবার টিস্যু ব্যবহার করে। টিস্যুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবহার কিছুটা কমেছে। আগে কিনতাম ২০ টাকায়। এখন ২৫ টাকার ওপরে কিনতে হয়।”
কথা হয় কামরুল হাসান নামের অপরএক টিস্যু ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “বাজারে ৮ থেকে ১০ কোম্পানির টিস্যু রয়েছে। দাম গত মাসের চেয়ে কিছুটা কমলেও আগের দামে আসেনি। এর মানে বেড়েছে ১০ টাকা কমেছে ৫ টাকা। আর গত চার মাসের ব্যবধানে টিস্যুর দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।”
পাশ্বর্বতী রাকিব নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, “চলতি বছরে দুই ধাপে টিস্যুর দাম বেড়েছে। বর্তমানে তৈরির কাঁচামাল পালপের দাম কমেছে। তাই দাম কিছুটা কম। আগামীতে আরও কমবে।”