• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে ভোর রাতের চেয়ে অন্ধকার


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩, ০৯:৫৮ পিএম
যে ভোর রাতের চেয়ে অন্ধকার
রায়েরবাজার বধ্যভূমি। ছবি : সংগৃহীত

১৪ ডিসেম্বর। যে দিনটি বিষাদ আর বেদনার স্মৃতি নিয়ে ফিরে এসেছে। ১৯৭১ সালে জাতির চিরগৌরবের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশীয় সহযোগীদের সহায়তায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।

বিজয়ের পর রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবীদের চোখ ও হাত বাঁধা ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধারের পর পাকিস্তানি বাহিনীর এই সুপরিকল্পিত হত্যার পরিকল্পনাটি প্রকাশ পায়। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত হয় বিশ্ববিবেক। পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিষয়টি কেবল রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস চক্র সারা দেশে গণহত্যার শুরু থেকেই শিক্ষক, সংস্কৃতিসেবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সমাজসেবকসহ অগ্রণী চিন্তার মানুষদের ধরে ধরে হত্যা করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহর থেকে বিজয়ের আগমুহূর্ত পর্যন্ত যেসব বরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে আমরা হারিয়েছি, তাদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান, আবুল খায়ের, আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, আলতাফ মাহমুদ, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সেলিনা পারভীন প্রমুখ।

পাকিস্তানি দুঃশাসনের দিনগুলোতে আমাদের লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা বিবেকের কণ্ঠস্বর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। নিজেদের জ্ঞান-মনীষা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন, আলোকিত করেছেন। এসব কারণেই তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের জিঘাংসার শিকার হয়েছেন। এত কম সময়ে এত বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যার উদাহরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছাড়া আর নেই।

এই দিনে আমরা জাতির এই মহান সন্তানদের শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করি। কিন্তু যারা নিজেদের জ্ঞান-মনীষা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন, তাদের বছরের একটি দিন স্মরণ করাই যথেষ্ট নয়। আমাদের অনুধাবন করতে হবে, কেন এই মহৎপ্রাণ মানুষগুলো জীবন দিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতি গঠনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে। অথচ যেকোনো ক্রান্তিকালে মানুষ তাদের কাছ থেকে সত্য, ন্যায়ের পথের দিশা পাওয়ার প্রত্যাশা করে। বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে যে দিবস পালিত হচ্ছে, তা সার্থক হবে, যদি আমরা তাদের উদার মানবিক চিন্তা ও গণতান্ত্রিক আদর্শকে ধারণ করতে পারি। তারা যে উন্নত ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই পথ ধরেই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জাতীয় জীবনে সংকট কিংবা স্থিতিশীলতার কালে তাদের আদর্শ হোক আমাদের অহংকার।

Link copied!