• ঢাকা
  • বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

আন্দোলনের ঢেউয়ে ভয়াবহ যানজট, জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম
আন্দোলনের ঢেউয়ে ভয়াবহ যানজট, জনমনে বাড়ছে ক্ষোভ
আন্দোলেন ঢেউয়ে ঢাকা ডুবছে ভয়াবহ যানজটে। ক্ষোভ বাড়ছে পথচারী ও নগরবাসীর। ছবি: সংগৃহীত

একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ রাজধানীকে ডুবিয়ে দিচ্ছে অসহনীয় যানজটে। এক এলাকার যানজট ছড়িয়ে পড়ছে অন্য এলাকায়। একাধিক স্থানে সড়ক অবরোধের প্রভাব পড়ছে গোটা মহানগরীতে। যানজট এক সড়ক থেকে আরেক সড়কে ছড়িয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন ব্যস্ত মানুষ। বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে হচ্ছে।

তবে ফুটপাত দখলমুক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের মধ্যে। রিকশাচালক থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের বড় বড় কর্মকর্তাদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। তারা সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন আর হতে দিতে চান না।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) গোটা রাজধানী জুড়েই দিনভর দেখা গেছে অসহনীয় যানজট। সকালে একদিকে সাত কলেজের শত শত শিক্ষার্থী আন্দোলনে নেমে সায়েন্সল্যাবসহ আশপাশের কয়েকটি সড়ক অবরোধ করেন। একই সময়ে মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরাও নেমে আসে রাস্তায়।

অন্যদিকে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নেন। তারা এক পর্যায়ে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের পাশে শিক্ষাভবনের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ জলকামান ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

রাজধানী সবচেয়ে ব্যস্ত ও জনবহুল সড়কগুলোতে একই সময়ে আন্দোলন শুরু করায় থমকে যায় যান ও মানুষ চলাচল। সকালে দেখা গেছে, সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে শাহবাগ মোড় ও আশপাশের সড়ক এবং মহাখালীর আশাপাশের সড়কগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। রিকশা বা গণপরিবহনে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থেকে বেশিরভাগ যাত্রীই বিরক্ত হন। এরপর ফুটপাত ধরে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করেন।

সায়েন্সল্যাব মোড়ের আলী হাসান নামের এক পথচারী বললেন, যেতে চাচ্ছিলাম পল্টনে। মাঝখানে নামতে হয়েছে ল্যাবএইড মোড়ে। শুনছি শাহবাগও অবরোধ করা হয়েছে। কীভাবে গন্তব্যে যাব ভেবে পাচ্ছি না। এভাবে যখন তখন যেখানে সেখানে সড়ক আটকে রাখা মানতে পারছি না।

নাজমুল নামের আরেক পথচারী গাউছিয়া থেকে রিকশা নিয়েছেন কারওয়ানবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাটা সিগন্যালে এসে দেখেন হাতিরপুল থেকে সোনারগাঁও রোডের আশপাশের রাস্তাগুলো ব্যাপক যানজট। ফলে তিনি রিকশা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন। তিনি বলেন, বাধ্য হয়ে রিকশা থেকে নামতে হলো। তবে ফুটপাতে দোকান, স্থাপনা আর দখলের কারণে চলাচল করা যায় না।

অবরোধের ফলে কাঁটাবন সিগন্যালে আটকে পড়া বিআরটিসি বাসের চালক বললেন, কোনো দিক দিয়েই তো বের হওয়ার ‍উপায় দেখছি না। খুব ঝামেলায় পড়েছি। কতক্ষণ এখানে আটকে থাকতে হবে জানি না। রমজান পরিবহনের একজন চালক বললেন, শাহবাগ হয়ে মৎসভবন ধরে আমাদের মৌচাকের দিকে যেতে হয়। এখন অবরোধের ফলে সরাসরি হাতিরপুল হয়ে বাংলামোটর চাওয়ার চেষ্টা করছি। তবে দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকতে হচ্ছে। যাত্রী যা ছিল নেমে গেছে।

শুধু বিআরটিসি কিংবা রমজান গাড়িই নয়, মিরপুর সড়ক থেকে শুরু করে শাহবাগ, মৎসভবন, বাংলামোটর সব সড়কেই গাড়িচালকদের একই অবস্থা। অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আটকে ছিলেন এক জায়গায়। অনেক যাত্রী বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন।

মূলত, বিক্ষোভ-অবরোধের কারণে মিরপুর সড়কসহ সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ঘিরে আশপাশের সড়কগুলোয় দীর্ঘ যানজট দেখা দেয় বেলা ১১টার পর থেকেই। সেই যানজট ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে অন্যান্য এলাকার সড়কেও। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বহু মানুষ। আর ধীরে ধীরে যানজটও ছড়িয়ে পড়তে থাকে গোটা মহানগরজুড়ে।

বিকেল তিনটার দিকে মৌচাক আর মগবাজারের আশপাশের সড়কগুলোতেও দেখা গেছে অসহনীয় যানজট। অভিজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর কোনো এলাকায় দীর্ঘসময়ের জন্য যানজট দেখা দিলে তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে গোটা মহানগরীতে। ধীর হয়ে যায় যানবাহন। দুর্ভোগ বাড়তে শুরু করে সাধারণ পথচারীদের।

ক্ষোভ প্রকাশ করে পথচারীরা বলছেন, কোনো আন্দোলন হলেই সড়ক অবরোধ, কার কাছে তাদের দাবি, কী দাবি সেটা তো সাধারণ মানুষের বিষয় নয়। তারা প্রতিদিনের জরুরি কাজের জন্যই সড়কে বের হন। অথচ আন্দোলনের নামে দুর্ভোগে ফেলে তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার নাজমুল হাসান বলেন, “রাজধানীর সড়কগুলো হলো নার্ভের মতো। একটির সঙ্গে আরেকটির যোগসূত্র আছে। কোথাও বন্ধ হয়ে গেলে পুরো নগরে এর প্রভাব পড়ে। আজও তা–ই হয়েছে।”

Link copied!