আজ ৫ জুন। বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা’। তবে বাস্তবে দেশের ভূমির যে অবক্ষয় ঘটছে আর মরুকরণের আওতা বাড়ছে তা ভয়াবহ বার্তা দিচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) ‘ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ ২০২০’ শীর্ষক এক গবেষণায় সেই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২২ সালে। গবেষকরা বলছে, গত ২০ বছর ধরেই মাটির অবক্ষয়ের প্রবণতা অব্যাহত আছে।
গবেষণার ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে দ্য ডেইলি স্টার বাংলার এক প্রতিবেদনে। গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে ধারণার চেয়েও অতি দ্রুত গতিতে ভূমির অবক্ষয় ঘটছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মাটির ভৌত, রাসায়নিক, জৈবিক বা অর্থনৈতিক যে বৈশিষ্ট্য তা হ্রাস পাচ্ছে। যা মোটামুটি ঢাকা শহরের আয়তনের সমান।
এসআরডিআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমীর মো. জাহিদ সতর্ক করে বলেছেন, ভূমির এমন বিপজ্জনক অবক্ষয় রোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। আগামী ৬৩ বছরের মধ্যে চাষযোগ্য কোনো জমিই থাকবে না বাংলাদেশে।
মূলত, মাটির উর্বরতা হ্রাস, জৈব পদার্থ হ্রাস, অম্লকরণ, লবণাক্ততা, মাটি দূষণ, মাটির ক্ষয়, নদী তীর ভাঙা, বালু ওভারওয়াশ, খরা, জলাবদ্ধতা, সয়েল সিলিং এবং বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয়কে ভূমি অবক্ষয় বলা হয়।
এসআরডিআই গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে ১ কোটি ১২৪ লাখ হেক্টর জমিতে মাঝারি থেকে অতি মারাত্মক মাত্রার ভূমি অবক্ষয় ঘটেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই আয়তন দেশের প্রায় ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ। ক্ষয়ে যাওয়া ভূমি ২০০০ সালের ১০ দশমিক ৭০ মিলিয়ন হেক্টর পূর্বানুমানের চেয়ে শূন্য দশমিক ৫৪ মিলিয়ন হেক্টর বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাসায়নিক সারের অত্যধিক ব্যবহার, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, শিল্প দূষণ, বন উজাড় এবং ইলেকট্রনিক ও চিকিৎসা বর্জ্য সঠিকভাবে ডাম্পিং না হওয়ার কারণে দেশের মাটি নষ্ট হচ্ছে। দুর্বল মাটি দেশের কৃষি এবং পরিবেশের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। মাটির অবক্ষয়ের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত চাষাবাদকেও দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মূলত, পানি সংকটের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্র অঞ্চল মরুকরণের ঝুঁকিতে পড়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল মারাত্মক লবণাক্ততার ঝুঁকিতে আছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ খান বলেন, আমরা নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ ছাড়াও বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও প্রত্যক্ষ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাবছর ক্রমাগত কৃষি কাজের কারণে মাটি বিশ্রাম পাচ্ছে না। সেইঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদনের কারণে মাটির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। মাটি প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত ও নিষ্ক্রিয় হয়। তবে গত ৫০ বছরে মানুষ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাটির নিষ্ক্রিয়করণ সেভাবে ঘটেনি।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ এস এম ফজলে বারী বলেন, সারাবছর ফসল উৎপাদনে ভূমি ব্যবহার হচ্ছে, ব্যবহার হচ্ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। এতে ক্ষতি হচ্ছে মাটির দরকারি অনুজীবের।
এদিকে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ২ হাজার বর্গকিলোমিটার জমির উর্বরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। পরিবেশ মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, যেসব জোনে ভূমি ক্ষয় হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করেছি। এফএও (খাদ্য ও কৃষি সংস্থা) আমাদের সহযোগিতা করছে।